নয়া দিল্লি: আসছে ২৬ জুলাই। সারা ভারত কার্গিল বিজয় দিবসের ২৫তম বার্ষিকী পালনের অপেক্ষায় রয়েছে। দেশের রক্ষায় সেনা সদস্যদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করছেন গোটা দেশের মানুষ। দেশের জন্য তাঁদের এই উৎসর্গকে স্মরণ করতে আয়োজন করা হয়েছিল ‘নিউজ৯ কারগিল অনারস’ অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে, TV9 গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা সিইও বরুণ দাস স্মরণ করলেন কার্গিল যুদ্ধের শহিদদের। তিনি বলেন, “ভারত তরুণ দেশ। তাই আমাদের কার্গিল বীরদের দেশপ্রেমের চেতনাকে আত্মস্থ করতে হবে।” আর কী বললেন তিনি?
শুরুতেই তিনি স্মরণ করেন, ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার সেই অমোঘ উক্তি, “হয় আমি তেরঙ্গা উত্তোলনের পরে ফিরে আসব, নয়তো আমি তাতে মোড়ানো অবস্থায় ফিরে আসব। তবে নিশ্চিতভাবে আমি ফিরে আসব।” যে ৫২৭ জন বীর সেনানায়ক শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা। যুদ্ধের শুরুতেই তাঁর বন্ধুদের এই কথাগুলো বলেছিলেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা। বরুণ দাস বলেন, এই শব্দগুলি ছিল, আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তার বোধের প্রতীক।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথাও স্মরণ করেন বরুণ দাস। তিনি বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী একজন শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। যুদ্ধের থেকে শান্তিকেই বেশি মূল্য দিতেন তিনি। লাহোর ঘোষণার প্রেক্ষাপট তৈরির জন্যই তিনি ঐতিহাসিক লাহোর বাস-যাত্রা করেছিলেন। উপমহাদেশ পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে যাচ্ছিল, কিন্তু তিনি উত্তেজনা কমিয়েছিলেন। আর পাকিস্তান তার কেমন জবাব দিয়েছিল? অটলজির লাহোর চুক্তিকে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী তার অশুভ ছায়া উন্মোচন করেছিল। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী এক সেকেন্ডও দ্বিধা না করে ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করছিলেন।
বরুণ দাস জানান, কার্গিল যুদ্ধ থেকে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কী সেই শিক্ষা? প্রথমত, ভারত কখনই আগ্রাসী হবে না। সর্বদা কথায় ও কাজে শান্তি প্রচার করবে। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন, “আমরা শান্তি চাই কিন্তু তা একতরফা হতে পারে না”। দ্বিতীয় পাঠ হল, যে শত্রু নিয়ম মানে না, তার জন্য ভারত কখনই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কম করবে না। বরুন দাস বলেন, “আমরা আরও শিখেছি, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল শাখা যেমন একটি সুনির্দিষ্ট এবং সু-সমন্বিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তেমন আমাদের এক ভারতের বিশ্বাস সর্বদা কাঙ্ক্ষিত ফল দেবে।” তিনি আরও বলেন, কার্গিল যুদ্ধের আরও এক শিক্ষা হল, যুদ্ধ শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে হয় না। কূটনৈতিক ময়দানেও লড়াই হয়। কার্গিল যুদ্ধের এই শিক্ষাগুলিই আজকের ভারতকে তৈরি করেছে।
তিনি আরও জানান, আজকের তরুণদের কাছে ভারতের সমসাময়িক যুদ্ধের নায়করা সত্যিকারের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। এই প্রসঙ্গে তিনি জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধের কথা উল্লেখ করেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেছিলেন। এই স্মৃতিসৌধটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে বলে জানান বরুণ দাস। তিনি বলেন, “আজ, আমরা ২৫তম কার্গিল বিজয় দিবস উদযাপন করছি। আমরা TV9 গ্রুপ, সাহসীদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে জড়ো হয়েছি। আমি কারগিল যুদ্ধের বীরদের এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর আরও হাজার হাজার সদস্য, যারা ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন ভারতকে সুরক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের প্রণাম করি TV9 এবং ‘স্যালুট’ ম্যাগাজিনের উদ্যোগে আয়োজিত নিউজ৯ ‘কারগিল অনারস’, আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি আমরা কতটা ঋণী, তার বহিঃপ্রকাশ।”