নয়া দিল্লি: কয়লা কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে এসেছিল আগেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। তবে সম্প্রতি সেই তদন্ত নয়া মোড় নেয়, যখন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে সরাসরি হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি আজ সকালে নির্ধারিত সময়েই পৌঁছে যান দিল্লির জামনগরে ইডির দফতরে। সকাল ১১ টা নাগাদ ওই দফতরের পিছন দিকে গেট দিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায় তাঁকে। তদন্ত সহযোগিতার কথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে। তারপর বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও দফতরেই রয়েছেন অভিষেক।
প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত আট ঘণ্টা পার হয়ে গিয়েছে। এখনও চলছে জেরা। মাঝে আধ ঘণ্টার টিফিনের বিরতি মিলেছিল বলে জানা গিয়েছে। আর এই কয়েক ঘণ্টা ধরে জয়লা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রশ্ন করা হয়েছে ইডির তরফে। জানা গিয়েছে, ইডির মোট চারজন আধিকারিক জেরা করছেন অভিষেককে। আর সেই প্রশ্নে অবশ্যই রয়েছে বিনয় মিশ্রের নাম। রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেকের শ্যালিকা মানেকা গম্ভীরের নামে থাকা অ্যাকাউন্ট নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁকে।
কী কী প্রশ্ন সাজিয়েছে ইডি?
তদন্ত চলছে অনেকদিন ধরেই। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম এই কেলেঙ্কারিতে অন্যতম প্রভাবশালী হিসেবে উঠে এসেছে। তাই বেশ গুছিয়েই প্রশ্ন তালিকা তৈরি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কোনোভাবেই যেন কোনও ইস্যু বাদ না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রেখেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
বিনয় মিশ্রের সঙ্গে অভিষেকের ঘনিষ্ঠতার কথা জানা যায়। আর কয়লা কেলেঙ্কারির অন্যতম অভিযুক্ত সেই বিনয় মিশ্র এখনও বেপাত্তা। সূত্রের খবর, এ দিন অভিষেককে সরাসরি প্রশ্ন করা হয় বিনয় মিশ্র এখন কোথায়? বিনয় মিশ্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক কী ছিল অভিষেকের? এই প্রশ্ন এ দিন চাপ তৈরি করার চেষ্টা করেছে ইডি। বিনয় মিশ্র লন্ডনে আছেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। বিনয় মিশ্র শর্ত সাপেক্ষে ভারতে ফিরে আসতে চান কি না সেই প্রশ্নও করা হয় অভিষেককে।
এরপরই আসে বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রসঙ্গে। থাইল্যান্ডের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে চান আধিকারিকরা। বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্র সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হয়। অনুপ মাঝি ওরফে লালার হিসেব রক্ষক নীরজ সি- এর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে বলেও ইডি সূত্রে খবর। দেশে এবং বিদেশে বিদ্যমান অভিষেকের সম্পত্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি।
উঠে এসেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর। এই সংস্থার কিছু আয় ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়েছে ইডি। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস গ্রুপের মালিক হলেন অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লতা বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা এবং মা। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে যে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে’ স্থানীয় দুর্বৃত্তদের (মস্তান) কাছ থেকে নিরাপত্তার টাকা আসার হিসেবে এসেছে। এ ছাড়া অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যালিকা মানেকা গম্ভীরের অ্যাকাউন্ট এবং থাইল্যান্ডের লন্ডন (বার্কলেজ ব্যাংক) অ্যাকাউন্ট সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি।
আর আজ ইডি দফতরে প্রবেশ করার আগে অভিষেক জানান, তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন তিনি। অভিষেক বলেন, ‘তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে তদন্ত করছে। একজন নাগরিক হিসেবে আমি সহযোগিতা করব।’ এর আগে রবিবারই বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলে গিয়েছেন, ‘আমার পিছনে ইডি-সিবিআই লাগানোর প্রয়োজন নেই। ১০ পয়সার দুর্নীতিও যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে ফাঁসি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক। আমি মৃত্যুবরণ করতে রাজি।’ আরও পড়ুন: সিআইডি হাজিরা এড়িয়ে রাতেই দিল্লির বিমান ধরছেন শুভেন্দু, ফের বৈঠক শাহ-নাড্ডার সঙ্গে?