নয়া দিল্লি: “আগামীকাল থেকে আমি আর ন্যায়বিচার দিতে পারব না, তবে আমি সন্তুষ্ট।” এই কথা বলেই, শুক্রবার (৮ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ করলেন বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। ২০২২-এর ৯ নভেম্বর, তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাঁকে বিদায় জানাতে এদিন সুপ্রিম কোর্টে একটি আনুষ্ঠানিক বেঞ্চ গঠন করা হয়। বিশিষ্ট বিচারপতি এবং বিশিষ্ট আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতিকে বিদায় জানান এবং বিচার বিভাগে তাঁর অবদান স্মরণ করেন। সকলেই তাঁকে বিচার বিভাগের ‘রক স্টার’ হিসাবে বর্ণনা করেন। অভিষেক মনু সিংভি-সহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী হালকা মেজাজে বিদায়ী প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁর ‘যৌবনের রহস্য’-ও জানতে চান। প্রধান বিচারপতিও তাঁর চেয়ার থেকে শেষ বার্তা দেন।
প্রধান বিচারপতি জানান, আনুষ্ঠানিক বেঞ্চ তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে তিনি যতটা সম্ভব শুনানির কাজ করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “গতকাল আমায় আমার রেজিস্ট্রার জুডিশিয়াল জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কখন আনুষ্ঠানিক বেঞ্চ তালিকাভুক্ত হবে। আমি তাঁকে বলেছিলাম, আমি যতটা সম্ভব কাজ করব, শেষ সময় পর্যন্ত আমি ন্যায়বিচার দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।”
একই সঙ্গে হাল্কা মেজাজে তিনি জানান, তাঁকে বিদায় জানাতে আদালতে কেউ থাকবে কিনা, সেই নিয়ে তাঁর মনে প্রশ্ন ছিল। তিনি জানান, রেজিস্ট্রার জুডিশিয়ালকে তিনি জানিয়েছিলেন, দুপুর ২টোয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তিনি বলেন, “কিন্তু মনে মনে ভাবলাম, শুক্রবার দুপুর ২টোয় কি কেউ এখানে আসবে, নাকি আমি স্ক্রিনে নিজেই নিজের দিকে তাকিয়ে থাকব?” তাঁকে বিদায় জানাতে আদালতে বিপুল সংখ্যক বিচারপতি এবং আইনজীবীরা উপস্থিত হওয়ায় তিনি কৃতার্থ বলে, জানান বিদায়ী প্রধান বিচারপতি।
বিচারপতিদের ভূমিকাকে তিনি তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে তুলনা করেন, যাঁরা প্রতিদিন সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে আদালতে আসেন। তিনি বলেন, “আমরা এখানে তীর্থযাত্রীদের মতো এসেছি, অল্প সময়ের পাখি। আমাদের কাজ করি এবং চলে যাই। আমরা যে কাজ করি, তা কোনও মামলা গড়তে পারে বা ভাঙতে পারে।”
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের অবসরের পর, এই দায়িত্ব নেবেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। বিচারপতি খান্নাকে, প্রধান বিচারপতি নিজেই তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে সুপারিশ করেছেন। বিচারপতি খান্নার হাতে এই দায়িত্ব ছেড়ে তিনি আশ্বস্ত বোধ করেছেন বলে জানান বিদায়ী প্রধান বিচারপতি। একজন ‘দক্ষ নেতা’ হিসাবে তাঁর প্রশংসা করেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন, “ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ব্যক্তিরা এই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমি জানি, আমার পরের ব্যক্তিটি, বিচারপতি খান্না অত্যন্ত স্থিতিশীল, অত্যন্ত দৃঢ়, অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন এক ব্যক্তি, আদালত সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন।”
সবশেষে তিনি জানান, আদালতের কাজই তাঁকে প্রাণবন্ত রেখেছে, সেটাই তাঁর ‘যৌবনের রহস্য’। তিনি বলেন, “এই আদালতই আমাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমরা রোজ এমন কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা করি, যাদের সম্ভবত আমরা চিনি না, জানি না। আমি আপনাদের সকলকে প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি, আমি আজ জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি, এবং এই মামলার সঙ্গে আগের কোনও মামলার মিল নেই। যদি আমি আদালতে কাউকে আঘাত দিয়ে থাকি, তবে, দয়া করে আমায় ক্ষমা করে দেবেন।”
এরপর তিনি উচ্চারণ করেন এক জৈন প্রবাদ, “মিছামি দুক্কদম”। যার অর্থ, “আমার সমস্ত অপকর্ম ক্ষমা করা হোক।” এই বলে নমস্কার করে শেষবারের মতো প্রধান বিচারপতির চেয়ার ছেড়ে শেষবারের মতো উঠে পড়েন তিনি।