জ্যোতির্ময় রায়: করোনা প্লাবনে দেশের একের পরে এক রাজ্য ভেসে যাচ্ছে। একের পর এক রাজ্যে চিকিৎসার করুণ রূপ সামনে আসছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের পরে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের ‘উদাসীনতা’ যে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অনেকটা দায়ী, তা প্রতিদিন আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। দৈনিক সংক্রমণ প্রতিদিন কার্যত বিপজ্জনক মাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, নিত্যদিন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারত ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে বিশ্বে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৩৯ জন, সেখানে ব্রাজিলের আক্রান্ত সংখ্যা মোট ৮২,১৮৬ জন। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রাজিলে মৃত হয় ৩,৮০৮ জনের, সেখানে ভারতে মৃত হয় ১০৩৮ জনের।
এপিডেমিওলজিস্টরা ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পরের মাস থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব আরও ভয়াবহভাবে দেখা দেবে। মানব সমাজের অদৃশ্য এই শত্রু এখনও নিজের চরম রূপ দেখায়নি।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োস্টাটিক্স এবং এপিডেমিওলজিস্ট অধ্যাপক ভ্রামার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “ভারতের করোনা পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “সংক্রমণের প্রকোপ এখনই কমবে না। প্রতিদিন ৫ লক্ষ পর্যন্ত নতুন কেস আসতে পারে এবং তিন থেকে চার হাজার মানুষের প্রতিদিন প্রাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা করোনা বিধি কঠোরভাবে পালন এবং সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের ব্যক্তব্য, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পাশাপাশি মাস্ক পরে থাকতে হবে এবং পরস্পরের মধ্যে দুই গজ দূরত্ব অতি আবশ্যক।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দেশে করোনার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। তবে মার্চের শেষের দিকে এবং এপ্রিলের শুরুতে করোনার সংক্রমণের হার আবারও তীব্রতর হয়। গত ১৫ দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। প্রতিদিনই দেড় লক্ষেরও বেশি রোগী সংক্রমিত হচ্ছেন। দেশের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, বিহার, কেরালা, তামিলনাড়ুতে সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে অনেক রাজ্য সরকার ধারাবাহিক বিধিনিষেধ এবং সাপ্তাহিক কার্ফু ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে, টিকা অভিযানকে আরও ত্বরান্বিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই দেশে রাশিয়ান ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি র ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনায় রাশ টানতে রাজ্যগুলিকে অঞ্চল ভিত্তিক কার্ফুর সুপারিশ কেন্দ্রের
কিন্তু জনগণ যতক্ষণ না সতর্ক হচ্ছেন, নিজে থেকে কঠোরভাবে করোনা রোধের নিয়ম পালন করছেন, ততক্ষণ করোনা জয় অসম্ভব। আড়ালে আবডালে কোথায় মৃত্যু ফাঁদ পেতে আছে কেউ জানে না। মনে রাখবেন, একটি মৃত্যু যেমন পরিবারের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। সেখানে সরকারের জন্য মৃত্যু কিন্তু একটি সংখ্যা মাত্র। তাই সাবধান, সরকারের নিয়ম পালন করুন এবং অন্যদেরকেও নিয়ম পালন করতে বলুন। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।
আরও পড়ুন: ৮ দফাতেই ভোট, তবে মানতে হবে কোভিড বিধি, সর্বদল বৈঠক শেষে ভিন্ন মেজাজে ঘাস-পদ্ম