মুম্বই: তাঁর বাবা প্রাক্তন IAS অফিসার। মা মনোরমা খেড়কর গ্রামের সরপঞ্চ। দাদুও প্রাক্তন IAS অফিসার। আর তিনি? MBBS পাশ করার পর বসলেন UPSC পরীক্ষায়। পাশ করলেন। এখন ট্রেনি IAS অফিসার। সেই পূজা খেড়করকে ঘিরে বিতর্ক টানা বেঁধেছে। ট্রেনি আইএএস অফিসার হয়ে গাড়িতে লাল বাতি লাগানো, কেবিনের দাবি, গত কয়েকদিনে সংবাদ শিরোনামে মহারাষ্ট্রের এই ট্রেনি আইএএস অফিসার। এমনকি, তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সবকিছু খতিয়ে দেখতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রে। এই পরিস্থিতিতে জেনে নিন পূজাকে ঘিরে বিতর্কের আগাগোড়া।
বছর চৌত্রিশের পূজা খেড়করের পরিবারের আদি বাড়ি মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলায়। পুনের একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন পূজা। তিনি এন্ডোক্রিনোলজিস্ট স্পেশালিস্ট। তাঁর বাবা দিলীপ খেড়কর প্রাক্তন IAS অফিসার। আর তাঁর মা মনোরমা খেড়কর আহমেদনগরের ভালগাঁও গ্রামের সরপঞ্চ। পূজার দাদু জগন্নাথ বুদ্ধবন্তও একজন আইএএস অফিসার ছিলেন।
পূজার ইউপিএসসি-তে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক-
২০২১ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন পূজা। ৮৪১ ব়্যাঙ্ক করেছিলেন। তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পূজা ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার ক্যাটেগরিতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ছাড় পেতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী বলে দাবি করেন। জানান, দৃষ্টিতে সমস্যা রয়েছে তাঁর। এরপরই বিতর্কের শুরু।
প্রতিবন্ধকতা প্রমাণ করতে পূজাকে দিল্লির এইমসে বাধ্যতামূলক শারীরিক পরীক্ষায় বসার জন্য বলা হয়। তারিখ ছিল ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল। সেইসময় পূজা জানান, তাঁর করোনা হয়েছে। আসতে পারবেন না। ওই বছরের ২৬ মে ফের তাঁকে পরীক্ষার জন্য এইমসে আসতে বলা হয়। সেদিন আসতে পারবেন না বলে জানান পূজা। এরপর ২৭ মে তাঁকে সফদরজং হাসপাতালে আসতে বলা হয়। এবার অন্য তারিখ দেওয়ার আবেদন জানান তিনি। সেইমতো ওই বছরের ১ জুলাই এইমসে আসতে বলা হয়। কিন্তু, সেবারও যাননি তিনি। ২০২২ সালের ২৬ অগস্ট ফের এইমসে আসতে বলা হয়। সেবার অবশ্য হাসপাতালে যান পূজা। প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা হয়। বাকি পরীক্ষার জন্য ২ সেপ্টেম্বর ডাকা হয় তাঁকে। কিন্তু, পূজা আসেননি।
সত্যিই কি দৃষ্টিশক্তির সমস্যার রয়েছে পূজার? কী সেই সমস্যা? সেটা জানতে এমআরআই পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, পূজা এইমসে না গিয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে এমআরআই রিপোর্ট করেন। এবং তা ইউপিএসসি-কে পাঠান। ইউপিএসসি তাঁর সেই রিপোর্ট খারিজ করে দেয়। এবং সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল(CAT)-এ মামলা দায়ের করে বলে, পূজার নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজ করা হোক। UPSC-র পক্ষে যায় CAT-র বিচার। পূজার নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজের নির্দেশ দেয় CAT।
কিন্তু, যে রিপোর্ট খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল, আচমকা সেই রিপোর্ট স্বীকার করে ইউপিএসসি। নিয়োগপত্র হাতে পান পূজা। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। যে ইউপিএসসি পূজার রিপোর্ট খারিজ করেছিল, কীভাবে তারাই পরে সেই রিপোর্টকে মান্যতা দিল। RTI কর্মী বিজয় কুম্ভার বলেন, CAT-র নিয়ম বলছে, কোনও প্রার্থী যদি শারীরিক পরীক্ষায় বসতে রাজি না হন, তবে তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হবে।
একইভাবে পূজার ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার ক্যাটেগরিতে আবেদন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পরিবারের বাৎসরিক আয় ৮ লাখের কম হলেই ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার শংসাপত্র পাওয়া যায়। RTI কর্মী বিজয় কুম্ভার বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পূজার বাবা দিলীপ খেড়কর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেখানে জানিয়েছিলেন, তাঁর মোট সম্পত্তি ৪০ কোটি টাকা। আর বাৎসরিক আয় ৪৯ লাখ টাকা। এমনকি, পূজার সম্পত্তির পরিমাণ ১৭ কোটি টাকা। তিনি কি করে ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার শংসাপত্র পেলেন, তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে।
পূজার নিয়োগ প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে এক সদস্যের কমিটি গড়েছে কেন্দ্র। দোষী প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত হবেন পূজা। কিন্তু, তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, ইউপিএসসি-তেও কি নিয়োগে অস্বচ্ছতা হয়?