কলকাতা: কেন্দ্রের জল জীবন মিশন (Jal Jeeban Mission) নিয়ে ফের রাজ্যকে তোপ শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari)। একইসঙ্গে এই প্রকল্পের আওতায় কাজের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কাটমানি নেওয়া হয়েছে বলে এদিন বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তিনি। যা নিয়ে ফের নতুন করে শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরে। কাঠগড়ায় তুলেছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায়কে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। আগামী সোমবারের মধ্যে জল মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাবেন বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু। করা হবে তদন্তের দাবি। একইসঙ্গে জনস্বার্থ মামলা করারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তিনি।
এদিন শুভেন্দু বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন সব ঘরে পরিশ্রুত জল যাবে। জল জীবন মিশন নামে কেন্দ্রের যোজনা আছে। কিন্তু রাজ্য এটা কোথাও উল্লেখ করে না। এই নিয়ে আমি আগের রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলাম। এদিকে জল জীবন মিশনে ১০০ শতাংশ ফান্ড দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এতে রাজ্য সরকারের কোনও ফান্ড থাকে না।” এই প্রকল্পের আওয়াতেই রাজ্য যে কাজ করেছে সেখানে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। হাওড়া জেলার একাধিক সংস্থা ফেরুল সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য খাটিয়েছে বলে অভিযোগ শুভেন্দুর। তালিকায় রয়েছে বালাজি ট্রেডার্স, একে ইন্ডাস্ট্রিজ, ইলেকো এন্টারপ্রাইজ, সাইবাবা এন্টারপ্রাইস, প্রীতি এন্টারপ্রাইজ নামে কয়েকটি সংস্থাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, টেন্ডার দেওয়ার যে নিয়ম তা মানা হয়নি বসে অভিযোগ শুভেন্দু। সেখানে কিছু গোলযোগের অভিযোগ করেছেন তিনি।
নলবাহিত জলের ট্যাপের মুখে ফেরুল লাগানো হয়। এই ফেরল কেনার সময়েই বড় দুর্নীতি হয়ে গিয়েছে বলে দাবি শুভেন্দুর। রীতিমতো একাধিক ডকুমেন্ট হাতে নিয়ে শুভেন্দুর দাবি, ফেরুলের এক একটির বাজারের দাম ২১৩। কিন্তু, নথিতে দেখা যাচ্ছে কেনা হয়েছে ৫৭০ টাকায়। একাধিক টেন্ডারের তথ্য হাতে সামনে এনে শুভেন্দু দাবি, ৩২ টা টেন্ডারে কোথাও ২৭ হাজার ইউনিট, কোথাও ৩২ টেন্ডারে ২৪ হাজার ইউনিট, ৩২টি টেন্ডারে ৭৩ হাজার ইউনিট ফেরুল কেনা হয়েছে। প্রতিটাই কেনা হয়েছে ৫৭০ টাকা দরে। এখন দেখার কেন্দ্রের কাছে শুভেন্দুর অভিযোগ পৌঁছালে কেন্দ্রের তরফে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “উনি কুৎসার উপর দাঁড়িয়ে আছেন। উনি যখন বিভিন্ন দফতরে ছিলেন সেখানে থেকেও বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। তাঁর পরিবারের লোকেরা যে পুরসভায় ছিল সেখানে শ্মশানে জমি পর্যন্ত বেচতে বাকি রাখেনি। সারদা-নারদায় যে অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেড যুক্ত তাঁদের এ ধরনের কথাবার্তা না বলাই ভাল। ”
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তোপ দেগে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এগুলি সব বাজার গরম করা কথা। কোনও অর্থ নেই। কারণ রাজ্য সরকার টেন্ডার ছাড়া এগুলি করে না। এরকম জনস্বার্থ মামলা কোর্টে রোজ হয়, খারিজ হয়। জনস্বার্থ মামলা বিরাট কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী এবং ওদের সরকারের বিরুদ্ধে যদি নাটক করতে হয় তাহলে আমিও প্রত্যেকদিন একটি করে জনস্বার্থ মামলা করতে পারি।”
শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য নিয়ে মন্ত্রী পুলক রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে, উনি কিছু বলতে চাননি। জানান, এখনই কিছু বলবেন না। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন।