কলকাতা: গরু পাচার থেকে অস্ত্রপাচার, রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গের একাধিক সীমান্তবর্তী অংশ নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজ্যের শাসকদল। বিএসএফের দুর্বল নজরদারির বিরুদ্ধেই রয়েছে মূল অভিযোগ। বেশ কিছু অংশে নজরদারির অভাবে অস্ত্রপাচার এবং গরু পাচারের করিডোর হয়ে উঠছে সীমান্ত এলাকা, এই অভিযোগের সুরই শোনা গিয়েছে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের গলায়। পাল্টা বিজেপির তরফে দাবি, শাসকদলের নিয়ন্ত্রণে গরু পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু যুযুধান দু’ পক্ষের মধ্যে যখন গরু পাচার এবং অস্ত্র পাচার নিয়ে রীতিমতো “তু তু ম্যায় ম্যায়” চলছে তখন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি অতুল ফুলঝেলে সরাসরি স্বীকার করে নিলেন, মালদহ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে স্থলসীমান্তের মোট ১২৭ কিলোমিটার অংশ কাঁটাতারহীন বা নন ফেন্সিং অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেই এলাকাগুলিতে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে ১৫৬টি এলাকার অবস্থা সবথেকে ‘ভালনারাবেল’। যা চিন্তায় রেখেছে বিএসএফকে। ইতিমধ্যেই এই অংশগুলিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং আধুনিক মানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা আগামী মার্চের মধ্যে সম্পূর্ণ করে এই অংশগুলি দিয়ে যাবতীয় পাচার রোধ করতে হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে নির্দেশ এসেছে দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের কাছে।
বিএসএফের তথ্য বলছে, উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে বাংলাদেশ সীমান্ত হচ্ছে ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটারের। যার মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে স্থল সীমান্ত রয়েছে ৯১৩.৩২৪ কিমি এবং জলসীমান্ত ৩৬৩.৯৩০ কিমি। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে স্থল সীমান্ত রয়েছে ৯৩৬.৭০৩ কিমি। দক্ষিণবঙ্গে প্রায় ৫৩৮ কিমি এবং উত্তরবঙ্গে ৩৭৫ কিমি অংশে কোনও কাঁটাতার নেই। অর্থাৎ ৯১৩ কিমি অংশ কাঁটাতারবিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তায় রেখেছে বিএসএফকে।
এদিন দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি অতুল ফুলঝেলে বলেন, “আগে আমাদের সীমান্ত এলাকা কতখানি তা বুঝতে হবে। আমাদের মোট সীমান্ত হচ্ছে ৯১৩ কিলোমিটার। দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে মোট পাঁচটি সীমান্তবর্তী জেলা রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ। দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে রয়েছে মোট ৯১৩ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব। এর মধ্যে ৩৬৩ কিলোমিটার নদী কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক সীমান্ত। কাঁটাতার লাগানো রয়েছে ৪০৫ কিলোমিটার সীমান্তে। বাকি যে অংশগুলিতে কাটা তার নেই সেই অংশগুলিতে বিএসএফের তরফে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সমীক্ষা চালানোর পর আমরা বেশ কয়েকটি এলাকাকে চিহ্নিত করেছি, যা ভালনারাবেল। অর্থাৎ যেখান থেকে অনুপ্রবেশ এবং অন্যান্য চোরাচালানের ক্ষেত্রে সব থেকে দুর্বলতম নজরদারি থাকে। এই এলাকায় নজরদারির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে ৮২৩ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।” সূত্রের খবর, দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে যে পাঁচটি জেলা রয়েছে সেখানকার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গত এক বছরে ৭৫,৬৬,৭৮,২৭৯ টাকার নানা পণ্য বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনসিডিল বোতল থেকে শুরু করে গাঁজা সহ নানা প্রকার মাদক দ্রব্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ, জাল ভারতীয় মুদ্রার নোট, গবাদি পশুও রয়েছে।