কলকাতা : লাগাতার বৃষ্টিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল আরও দু’জনের। দক্ষিণ দমদমের বান্ধবনগরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল দুই কিশোরীর। দু’জনেরই বয়স ১২-১৩ বছরের আশেপাশে। জলমগ্ন রাস্তায় পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় ভারসাম্য রাখতে না পেরে বাতিস্তম্ভে হাত দিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় দু’জনেই।
মৃত দুই কিশোরী শ্রেয়া বণিক (১২), অনুষ্কা নন্দী (১৩)। দুই কিশোরীর মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর সুরজিৎ রায়চৌধুরী। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন, “দুর্ঘটনার উপরে কারও হাত নেই। দমদমের নিকাশি ব্যবস্থা বাগজোলা খালের উপর নির্ভর। খালের জল না নামলে কিছু করার নেই। দুই কিশোরী গরিব পরিবারের সন্তান। খুব খারাপ লাগছে। সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কী বলতে পারি।”
বাগজোলা খালের সংস্কারের দিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই রাজ্য প্রশাসনের। ঠিক যেভাবে ভ্রুক্ষেপ নেই বাকি আর পাঁচটা জায়গার জল নামানোর। হ্যাঁ, এক্ষেত্রে একবালপুরকে আপনি ব্যতিক্রম ধরতেই পারেন। আর দক্ষিণ দমদমে তো ভোটও নেই। সুতরাং, হেলদোলও নেই রাজ্যের।
আর বাতিস্তম্ভ? সেগুলিই বা কী অবস্থায় ছিল? কেন সৌন্দর্যায়নের আলো প্রাণ কাড়ল দুই কিশোরীর? স্থানীয় সূত্রে খবর, সৌন্দর্যায়নের জন্য লাগানো অনুচ্চ বাতিস্তম্ভের সুইচ বক্স খোলা ছিল। ওখানে নাকি এ ধরনের বাতিস্তম্ভগুলি এ ভাবেই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। দুর্যোগের সময় বাতিস্তম্ভের সুইচ বক্স বন্ধ থাকার কথা। সাধারণ নিয়মে এটাই হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে চূড়ান্ত অবহেলার ছবি ধরা পড়ছে। আর তার মাশুল গুনতে হল দুই কিশোরীকে। কবে টনক নড়বে প্রশাসনের?
এদিকে গতকাল খড়দহে এক পরিবারের তিন সদস্যের বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। বাড়ির ভিতরে জল ঢুকে গিয়েছিল। মোবাইলে চার্জ দিতে গিয়েই শর্ট সার্কিট হয়ে বিপত্তি।
খড়দহের এলাকাবাসীদের অভিযোগ, বৃষ্টি বাড়লেই গোটা এলাকা এভাবেই জল থইথই করে। জল ঢুকে যায় বাড়িতেও। বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। রাজনৈতিক নেতাদের কেবল দেখা যায় নির্বাচনের সময়ে। পরে তাঁদের আর পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের।
জলযন্ত্রণায় ভুক্তভোগী এক বাসিন্দার কথায়, “বৃষ্টি হলেই জল জমবে। এতদিন বলে বলেও লাভ হয়নি। তিন-তিনটে লোক মারা যাওয়ায় তারপর প্রশাসনের হুঁশ ফিরল! এখন তো আমরা বাড়িতে থাকতেও ভয় পাচ্ছি। অনেকে তো বাড়ি ছেড়ে চলেও যাচ্ছে, এই ভয়ে যাতে কারেন্ট শক না খেতে হয়! কবে জল নামবে কেউ জানে না।”
অন্য় আরেক এলাকাবাসী বলেন, “ভোট আসলে বাড়ির দুয়ারে দুয়ারে এসে হাতজোড় করে যান নেতারা। ভোট গেল তো সব গেল! তখন আর আমাদের সমস্যার কথা শোনার সময় নেই। এভাবে যে কতদিন চলবে জানি না।” কিন্তু, কেন এইভাবে জল জমছে? কেনই বা কোনও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না?
আরও পড়ুন: Bhabanipur By-Election: ভোট এলে তবেই কি জল নামবে শহরের বাকি এলাকায়?