Primary Teacher: হাইকোর্ট বলেছিল আগেই, হঠাৎ ২৩ হাজার শিক্ষকের বদলির সিদ্ধান্ত কেন নিল সরকার
Primary School: ২০২৩-এ শিক্ষক বদলির নতুন গাইডলাইন তৈরি হয়। স্কুলে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক কতজন রয়েছে তা প্রথম গুরুত্ব পাবে। যেখানে বিষয় অনুযায়ী ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ব্যবধান অনেক, সেই স্কুলেই বদলি করা হবে শিক্ষককে। আরও বলা হয়েছিল যে, জেলার মধ্যে কোনও স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে, প্রাথমিকভাবে তাঁদের পাঠানো হবে সেই জেলারই অন্য কোনও স্কুলে।

কলকাতা: বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়েছে গিয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ দুর্নীতির অভিযোগ। পরীক্ষা হলেও এখনও আটকে প্রাথমিকের নিয়োগ। ২০২২-এ টেট হলেও প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এবার সেই প্রাথমিকেরই ২৩ হাজার শিক্ষককে একধাক্কায় বদলি করার নির্দেশ দেওয়া হল। কেন এমন নির্দেশ? আদৌ কার্যকর হবে তো? কতটা সুবিধা হবে।
কোনও কোনও স্কুলে একজনই শিক্ষক। তিনি না এলে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি! এটাই বাংলার একাধিক স্কুলের নিত্যদিনের ছবি। এক একটি স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা একজন বা দু’জন। তাঁরা প্রয়োজনে সিএল বা পিএল নিলেই সেদিনের মতো বন্ধ থাকে স্কুল। ব্যাগ কাঁধে স্কুলে এসেও আবার পড়ুয়াদের ফিরে যেতে হয় বাড়িতে। আর যদি শিক্ষক আসেনও, তাহলেও কাদের ক্লাস নেবেন? কোন বিষয়ের ক্লাস নেবেন? এভাবে কি আদৌ শিক্ষা ব্যবস্থা চলে?
এই প্রশ্ন উঠেছে অনেক আগেই। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বছর তিনেক আগেই একটি পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, যে স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক আছে, সেখান থেকে শিক্ষক সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হোক। পোস্টিং দেওয়া হোক সেই সব স্কুলে, যেগুলি শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। হাইস্কুল, প্রাথমিক স্কুল সর্বত্রই এই অবস্থা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এসআইআর। কোনও কোনও স্কুলে তালা ঝোলার মতো অবস্থা। কোথাও কোথাও পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে পাঁচজনই চলে গিয়েছেন বিএলও ডিউটি-তে। ফলে স্কুলগুলির অবস্থা আরও শোচনীয়।
বছর কয়েক আগে শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত হাওড়ার একটি মামলায় উঠে আসে, একটি স্কুলে ১৩ জন পড়ুয়ার জন্য ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। অন্যদিকে, হাওড়ারই আর একটি স্কুলে প্রায় ৫৫০ প়ড়ুয়া আছে, অথচ শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ৮। হাইকোর্টের পরামর্শের পর শিক্ষক বদলির একটা উদ্যোগ রাজ্য সরকার নিয়েছিল ঠিকই। তবে সেটা এখনও বিশ বাঁও জলে। আর এবার প্রাথমিক স্কুল নিয়ে দেওয়া হল নির্দেশিকা।
ঠিক কী বলা হয়েছে নির্দেশিকায়?
২৩,১৪৫ জন শিক্ষককে বদলির নির্দেশ দিয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর।
দফতরের হিসেব বলছে, সারা রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে অতিরিক্ত ২৩,১৪৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। অর্থাৎ ওই স্কুলগুলোতে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। আবার বিভিন্ন স্কুল মিলিয়ে ২৩,৯৬২ জন শিক্ষকের ঘাটতিও রয়েছে। অর্থাৎ, শিক্ষকের সংখ্যা পড়ুয়ার তুলনায় কম। ২২টি জেলায় তাই বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে বদলি হবে জেলার মধ্যেই। অর্থাৎ একজন শিক্ষক যে জেলার স্কুলে চাকরি করেন, সেই জেলারই অন্য একটি স্কুলে তাঁকে বদলি করা হবে।
এ ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। এক, ঘাটতি আর অতিরিক্ত শিক্ষকের সংখ্যার মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই। তাহলে এতদিন নিয়োগ না হওয়া সত্ত্বেও সার্বিকভাবে কোনও ঘাটতি তৈরি হয়নি? দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছে, হাইস্কুলের ক্ষেত্রেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কার্যকর হয়নি। এবার কি কার্যকর হবে?
উল্লেখ্য, ২০২৩-এ শিক্ষক বদলির নতুন গাইডলাইন তৈরি হয়। স্কুলে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক কতজন রয়েছে তা প্রথম গুরুত্ব পাবে। যেখানে বিষয় অনুযায়ী ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ব্যবধান অনেক, সেই স্কুলেই বদলি করা হবে শিক্ষককে। আরও বলা হয়েছিল যে, জেলার মধ্যে কোনও স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে, প্রাথমিকভাবে তাঁদের পাঠানো হবে সেই জেলারই অন্য কোনও স্কুলে।
বঙ্গীয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, সমস্যা তো অনেকদিনের। হঠাৎ কেন সরকারের এমন উদ্যোগ? বিধানসভা ভোটের আগে চাপে রাখতেই কি এমন সিদ্ধান্ত নিল সরকার। নতুন নির্দেশিকায় নতুন সমস্যা তৈরি হবে নাকি সমাধান হবে এবার? এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে শিক্ষা মহলে।
