কলকাতা: শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরনো। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাত ধরে ১৭৫৭ সালে শুরু হয় এই পুজো। কালের নিয়মে কেটে গিয়েছে বহু বছর। যে ঐতিহ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল সেই পুজো, তার অনেকটাই এখন জৌলুস হারিয়েছে। তবে প্রাচীন রীতি, আচার, উপাচার ও নিষ্ঠা ভরে আজও চলছে শোভাবাজার রাজবাড়িতে মহামায়ার আরাধনা।
রাজ পরিবারের সদস্যরা জানান, হয়ত আগে জৌলুস অতটা নেই, তবে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা রীতি মেনেই এখনও এখানে মাতৃ আরাধনা হয়। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন, সপ্তমী নবপত্রিকা স্নান ও সপ্তমী পুজো – আয়োজনে কোথাও কোনও খামতি থাকে না।
আগে অষ্টমীর দিন কামান দাগা হতো। আর তার মধ্যে দিয়েই শুরু হতো সন্ধিপুজোর। কিন্তু এখন কামান দাগা না হলেও পঞ্জিকা ও শাস্ত্র মেনে সময় ধরে করা হয় অষ্টমী পুজো। ১০৮ প্রদীপ জ্বলে ওঠে মায়ের সামনে। নবমী পুজোতেও থাকে বিশেষত্ব।
পরিবারের বউ নূপুর মিত্র বলেন, “সপ্তমীতে কলাবউ স্নানে যায়। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় হয় নবপত্রিকার পুজো। সেখানে কলাবউকে সাজিয়ে পুজো করা হয়। সপ্তমীর সকালে গঙ্গাস্নান। এরপর একে একে ভোগ, আরতি, বলি নিয়ম মেনেই হবে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে বিজয়া দশমীতে শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় আগে ওড়ানো হতো নীলকণ্ঠ পাখি। তবে এখন সেই নীলকণ্ঠ পাখি কার্যত বিলুপ্ত হওয়ার কারণে প্রাচীন রীতিকে বজায় রাখতে থার্মোকলের নীলকণ্ঠ পাখি তৈরি করে গ্যাস বেলুনের মাধ্যমে তা উড়িয়ে দেওয়া হয় আকাশে।
রাজবাড়ির সদস্যরা বলেন, এই উড়িয়ে দেওয়া নীলকণ্ঠই কৈলাসে গিয়ে খবর দেয় উমা বাপের ঘর ছেড়ে এবার কৈলাসে ফিরছেন। থিম পুজোর রমরমার মাঝেও বাংলার যতগুলি ঐতিহ্যশালী বনেদি বাড়ির পুজো দেশে-বিদেশে চর্চিত, অন্যতম শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো। সাবেকিয়ানা আর ঐতিহ্যকে বুকে জড়িয়ে প্রায় ২৬৭ বছর ধরে এখানে পূজিত হচ্ছেন দুর্গতিহারিণী।