কলকাতা : পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে বাংলা ভাষা পড়তে, লিখতে জানতে হবে। একইসঙ্গে বাংলা ভাষায় কথাও বলতে পারতে হবে। না হলে চাকরি পাওয়া যাবে না। সেই নিয়মেই ৮ চাকরিপ্রার্থীকে বাতিল করল পাবলিশ সার্ভিস কমিশন (PSC)। মঙ্গলবার নোটিস জারি করে একথা জানিয়েছে তারা। এর আগেও এই নিয়ম ছিল। কিন্তু, এই প্রথম পিএসসি-র তরফে নোটিস জারি করে চাকরিপ্রার্থীদের বাতিল করার কথা জানানো হল। তবে যে সব চাকরিপ্রার্থীর মাতৃভাষা নেপালি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বলবৎ হবে না।
২০১৯ সালে পিএসসি এই ক্লার্কশিপের পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। ঘোষিত শূন্যপদ ৭২২৭। প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। দ্বিতীয় দফায় ৫০ নম্বরের বাংলা ও ৫০ নম্বরের ইংরেজি পরীক্ষা হয়। তৃতীয় দফায় ছিল কম্পিউটার টাইপিং টেস্ট। ১৩ জুন পিএসসি-র তরফে নোটিস দিয়ে জানানো হয়, ৩০৪ জন প্রার্থী কম্পিউটার টাইপিং টেস্টে পাশ করতে পারেনি।
গতকাল, অর্থাৎ মঙ্গলবার আরও একটা নোটিস দিয়ে জানানো হয়, বেঙ্গলি এফিসিয়েন্সি টেস্টে পাশ করতে পারেনি ৮ প্রার্থী। এই টেস্টে চাকরিপ্রার্থীরা বাংলা পড়তে, লিখতে এবং বলতে পারেন কি না, তার পরীক্ষা হয়। সেখানেই ওই ৮ চাকরিপ্রার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তবে যাঁদের মাতৃভাষা নেপালি, তাঁদের এই এই নিয়ম প্রয়োজ্য নয় বলে নোটিসে জানানো হয়। জানা গিয়েছে, ওই চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন জানিয়েছিলেন মূলত সেক্রেটারি ও ডিরেক্টর পদের জন্য।
বাংলায় কাজ করার জন্য প্রশাসনিক কর্তাদের বাংলা জানাটা জরুরি বলে কিছুদিন আগে বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, এ রাজ্যে চাকরি পেতে শুধু বাংলা ভাষাই নয়, জানতে হবে স্থানীয় ভাষাও। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলার যে জায়গায় কাজ করছেন, সেখানকার ভাষা যদি না জানেন, তবে সাধারণ মানুষ যখন একজন বিডিও বা এসডিও-র কাছে যাবেন, তখন তাঁর কথা বুঝবেন কী করে? মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, অন্য ভাষা জানলে আপত্তি নেই। তবে তাঁরা চান, বাংলায় কাজ করতে গেলে বাংলা ভাষাটা জানতে হবে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা গেল পিএসসির নোটিসে। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলা লিখতে, পড়তে না পারায় ওই ৮ চাকরিপ্রার্থীকে বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, কমিশন নোটিস জারি করে এ কথা জানানোর পর আসরে নামে বাংলা পক্ষ। তাদের দাবি, এটা তাদের জয়। বাংলা পক্ষর তরফে গর্গ চট্টোপাধ্যায় সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, বাংলা পক্ষর লড়াইয়ের ফলে একটি বড় প্রাপ্তি। WBPSC বাংলায় ঠিকমতো টাইপ না করতে পারার জন্য ৮ জনের চাকরির প্রার্থীপদ বাতিল করল। বাংলায় নতুন ভোরের সূচনা হল। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, তাঁদের মূল লড়াই ১০০ নম্বরের বাংলা পেপার বাধ্যতামূলক করা। সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, কম্পিউটার টাইপিং টেস্টের জন্য ৯৩০০ প্রার্থীকে ডাকা হয়েছিল। কমিশনের তরফে জানা গিয়েছে, কম্পিউটার টাইপিং টেস্ট পর্বে নথি যাচাই এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি অনেকে। তারপর উত্তীর্ণ হতে পারেননি ৩০৪ জন। সবমিলিয়ে সেইসব প্রার্থীর সংখ্যা ১৫০০-র বেশি। আপাতত চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন ৭৮০০-র কম। যেখানে শূন্যপদ ৭২২৭। আজ ক্লার্কশিপ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।