কলকাতা: প্রাচীনকালে রাজা-বাদশাদের বাড়িতে কোনও শুভ অনুষ্ঠান, বিবাহ ইত্যাদি আয়োজন হলে ভিয়েন বসত। সেই ভিয়েন আজও বসে শোভাবাজার রাজবাড়িতে। ষষ্ঠীর বিকেলে থেকে একদিকে যখন ঠাকুর দালানে দেবী দুর্গার আবাহন আর অধিবাসের প্রস্তুতি চলছে, তখনই রাজবাড়ির এক ধারে চলছে ভিয়েন। ভিয়েন বলতে বোঝায়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন তৈরির কাজ চলে। প্রস্তুত করা হচ্ছে দেবী দুর্গার ভোগের জন্য প্রায় ১২-১৪ রকমের মিষ্টান্ন। তার মধ্যে রয়েছে, মিষ্টি গজা, চৌকো গজা, দরবেশ, মতিচুর, লেডিকেনি, জিলিপি, নিমকি, পান্তুয়া-সহ একাধিক পদ। এই সব নিবেদন করা হবে দেবী দুর্গাকে। বংশ পরম্পরায় মেদিনীপুরের পাশকুড়া থেকে আসা কারিগররা তৈরি করছেন এই মিষ্টান্ন।
গোটা বিষয়টির মধ্যেই একটি রাজকীয় ব্যাপার। রাজবাড়ির মধ্যেই তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন। ঝুরি ভর্তি করে সেগুলি তুলে রাখা হচ্ছে সযত্নে। অতীতে কোনও রাজবাড়ি বা বনেদিবাড়িতে কোনও শুভ অনুষ্ঠান বা পুজো-পার্বনের সময় এভাবে ভিয়েন বসত। মিষ্টান্ন তৈরির এই প্রক্রিয়াকেও বলা হয় ভিয়েন। আজ শোভাবাজার রাজবাড়িতেও আরও এক ঝলক ধরা পড়ল সেই ভিয়েন। একদিকে যখন ষষ্ঠীর আবাহন চলছে, তখন রাজবাড়ির এক প্রান্তে তৈরি হচ্ছে রকমারি মিষ্টান্নের সম্ভার।
ষষ্ঠীর বিকেলে রাজবাড়িতে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় হয়েছে ঠাকুর দেখতে। মানুষের ঢল নেমেছে শোভাবাজার রাজবাড়িতে। আর একইসঙ্গে নিঃশব্দে হয়ে চলেছে এই রাজকীয় কর্মযজ্ঞ। সাড়ম্বরে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন। যাঁরা এই মিষ্টান্নের কারিগর, তাঁরাও বংশানুক্রমিকভাবে শোভাবাজারের ভিয়েনে কাজ করে চলেছেন। এক কারিগর জানালেন, তাঁরা নাকি ২৬৭ বছর ধরে বংশানুক্রমিকভাবে শোভাবাজার রাজবাড়ির এই কাজ করে আসছেন।