কলকাতা: ‘হয়ত আর দু’চার মাস, বা ছয় মাস, কিংবা ছয় বছর বাঁচব। বাঁচার জন্যই তো এখানে পড়ে আছি…’ কথাগুলো বলতে বলতে একরাশ হতাশা যেন ঝরে পড়ছিল প্রৌঢ় ডালিম রায়ের গলা থেকে। এসএসকেএম-এর এক কোণায় বসে একটি চিকিৎসার জন্য ঠায় অপেক্ষা যাচ্ছেন তিনি। ডালিমবাবুর মলদ্বারে টিউমার রয়েছে। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, সেটা ক্যানসার হতে পারে। কিন্তু, ক্যানসারের চিকিৎসা করতে গেলে তো বায়োপসি রিপোর্ট লাগবে। সেই রিপোর্ট পেতে পেতেই অনেকটা সময় বেরিয়ে গেল বলে অভিযোগ।
বলা হয়েছিল, বায়োপসি রিপোর্ট পেতে ১৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, এক মাস লেগে গিয়েছে ডালিমবাবুর বায়োপসি রিপোর্ট হাতে পেতে পেতে। ক্যানসারের পরিণতির কথা বিলক্ষণ জানেন প্রৌঢ়। ধরেই নিয়েছেন, হয়ত আর বেশিদিন বাঁচবেন না। কিন্তু তারমধ্যেও বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি অসম্ভব মানসিক বল নিয়ে। কিন্তু ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে তো চিকিৎসায় দেরি হলে চলবে না! আর এদিকে রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার উৎকর্ষ কেন্দ্র এসএসকেএম হাসপাতালে এমনভাবেই এক কোণায় চিকিৎসা পাওয়ার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন তিনি। চাইছেন শুধু, সঠিক সময়ে যেন সঠিক চিকিৎসাটুকু পান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বিস্ফোরক দাবি করেছেন। বলেছেন, তাঁর ভুল চিকিৎসা হয়েছে। সরাসরি কোনও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। তবে বিদেশ সফর থেকে ফিরে বিমানবন্দর থেকে সোজা তিনি চলে গিয়েছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে, তারপর থেকে বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্যতম স্তম্ভ হল এসএসকেএম হাসপাতাল। রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রথম সারির সেই উৎকর্ষ কেন্দ্রে আমজনতাকেও অনেকক্ষেত্রেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে বিলম্বিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি কলকাতার সব মেডিক্যাল কলেজের সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। জারি করা হয়েছে একগুচ্ছ নির্দেশিকাও। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা কেমন? খোঁজখবর নিতে গিয়ে এসএসকেএম চত্বরে দেখা মিলল ডালিম রায়ের। এসএসকেএম হাসপাতালে এক কোণায় মাটিতে বসে প্রৌঢ় ডালিমবাবু।
টিভি নাইন বাংলার ক্যামেরায় একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। বললেন, “১৫ দিন ডেকে পাঠিয়েছে। চিকিৎসা পাচ্ছি না। ডাক্তার বলে দিয়েছে আমার ক্যানসারের কথা। ক্যানসার বিভাগে রেফার করেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতে সব মিলিয়ে চার মাস কাটিয়ে দিয়েছে।” চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে বিলম্ব হওয়ার একরাশ হতাশা নিয়ে বলছেন, “হয়ত দু’চার মাস, বা ছয় মাস কিংবা ছয় বছর বাঁচব। আমি বাঁচার জন্যই তো এখানে পড়ে আছি।”