নন্দীগ্রাম: ‘আমি যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয়? নন্দীগ্রামে আমার নামটা যেন থাকে।’ পূর্ব মেদিনীপুরে তথা নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে একথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনে মাঠ জুড়ে তখন করতালির ঝড়। ২১-এর নির্বাচনের আবহে বোধহয় সেটাই ছিল সর্বপ্রথম ‘বড় খবর’। তারপর মমতার অ্যাক্সিডেন্ট, হুইল চেয়ারে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচার, সব ফোকাস কেড়ে নিয়েছিল নন্দীগ্রাম। কিন্তু ভোট বাক্সে জিতে গেলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বাকি ফলাফল যাই হোক না কেন, মমতার হার হয়ে গেল বিরোধীদের অন্য়তম শক্তি। সে কারণেই কি পূর্ব মেদিনীপুর শাসকের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ? শনিবার কাঁথিতে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) হাই ভোল্টেজ সভার আগে তেমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে সভায় উপস্থিত হবেন অভিষেক। শান্তিকুঞ্জের এত কাছের একটি ময়দান কেন বেছে নেওয়া হল? নিছকই কাকতালীয় নাকি অধিকারী গড়ে শক্তি পরীক্ষা করতে চাইছে শাসক দল? প্রশ্ন উঠছে। আর এই সভা আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, চোখে অস্ত্রোপচার সেরে আমেরিকা থেকে ফেরার পর এটাই অভিষেকের প্রথম জনসভা। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিতে যখন কোমর বেঁধে নেমেছে সব শিবির, তখন সেই পূর্ব মেদিনীপুরকেই বেছে নিয়েছে ঘাসফুল শিবির। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই সভা করে গোটা রাজ্য তথা পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষকে বার্তা দিতে চাইছেন, এই জেলা তৃণমূলের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। আর সভা হচ্ছে, সেই ডিসেম্বর মাসের শুরুতে, যে ডিসেম্বর নিয়ে বারবার সরকারকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিরোধীরা।
বিধানসভায় এই জেলায় মমতার পরাজয়ের কথা বারবার মনে করিয়ে দেন শুভেন্দু। কথায় কথায় নেত্রীকে হারানোর কথা শোনা যায় তাঁর মুখে। সেই পরাজয় ভুলিয়ে দিতেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৎপর তৃণমূল। শোনা যাচ্ছে, এই ভোটের আগে নাকি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একাধিক কর্মসূচি নিতে উদ্যোগী হয়েছে শাসক দল। বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল চাইছে, এই জেলায় এতটাই ফোকাস বাড়াতে যাতে বিরোধী দলনেতা রাজ্যের আর কোথাও না গিয়ে জেলা সামলাতেই ব্যস্ত থাকেন। সে সব কৌশল সময়েই বোঝা যাবে, তবে আপাতত শনিবার জনসমাগমেই নজর থাকবে দলের কর্মীদের। বিশেষত নন্দীগ্রাম থেকে কেমন সাড়া পাওয়া যাবে, সেটাও খেয়াল রাখবে জেলা নেতৃত্ব।
তৃণমূল নেতা সুপ্রকাশ গিরি জানিয়েছেন, মাঠের থেকেও মাঠের বাইরে থাকবেন বেশি মানুষ। তাঁর কথায়, আবেগের নাম অভিষেক। তাই অভিষেকের সভায় লোক ঠেকানো যাবে না। আর এই সভা নিয়ে যখন গত কয়েকদিন ধরে চর্চা চলছে বিভিন্ন মহলে, তখন শুভেন্দু উত্তর দিয়েছেন, ‘আমি নেত্রীকে হারিয়েছি, অভিষেককে প্রতিপক্ষ বলে মনে করি না।’