কলকাতা: জাতীয় শিক্ষা নীতির (National Education Policy) ভালটুকু নেওয়া হবে, খারাপ বাদ দেওয়া হবে এই ছিল রাজ্য সরকারের অবস্থান। তার জন্য জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়নের কমিটি গড়েছিল রাজ্য সরকার। কমিটিতে ছিলেন শিক্ষাবিদরা ও উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের সভাপতি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি। সেই কমিটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সম্প্রতি রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে। রিপোর্টে যা যা বলা হয়েছে, তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রায় জাতীয় শিক্ষানীতির সমান বলে দাবি সূত্রের। চালু হচ্ছে ৪ বছরের ইন্টিগ্রেটেড স্নাতক কোর্স। উঠে যাচ্ছে এম ফিল। একইসঙ্গে আসছে মেজর মাইনর কনসেপ্ট। পাশাপাশি এই রিপোর্টেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অব ক্রেডিটের (Academic Bank of Credit) উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।
কী এই অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অব ক্রেডিট?
অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অব ক্রেডিট চালু করতে আগেই রাজ্য সরকারের কাছে এসে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসির চিঠি। এ নয়া সিস্টেমে বলা হচ্ছে একজন ছাত্র কোনও একটি নির্দিষ্ট কোর্স সামন্য কিছুদিনের জন্য বা বলা ভাল একটি সেমেস্টারের জন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করে আসতে পারবেন। একইসঙ্গে করতে পারবেন নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার খাতায় যোগ করতে পারবেন ক্রেডিট। সহজ কথা অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও একটি কোর্স ভাল লাগলে সেখানেও কিছুদিনের জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করতে করতে পারবেন একজন ছাত্র। পাশাপাশি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েও সমানতালে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। সোজা কথায় উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য থাকবে আলাদা আকাদেমিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। সেখানে ডিজিটাল মাধ্যমে থাকবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের পাওয়া ক্রেডিট।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
যদিও রাজ্যের এই শিক্ষানীতিতে খুশি নন অধ্যাপকদের একাংশ। তাদের মতে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রয়োগের পরিকাঠামোই নেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। শিক্ষাবিদদের তরফে উঠে এসেছে নানা মতামত। এ প্রসঙ্গে আগেই শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, পড়ুয়ারা সত্যিই এত সহজে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে পারবে কিনা, গিয়ে সেখানে থাকতে পারবে কিনা, এত কতটা সহজ? এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার লোকেরা ভাবেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। শিক্ষাবিদ সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, “এর জন্য যে পরিকাঠামোর দরকার তা আমাদের রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।”
যদিও এই সরকারি সিদ্ধান্তের পক্ষেও উঠে এসেছে নানা মতামত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে এ ধরনের স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু আছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, আমাদের দেশেও সর্বত্র এই ব্যবস্থা চালু হলে উচ্চশিক্ষার মান বাড়বে। তা নানা বাধা থাকলেও এগোনোর চেষ্টা করলে ক্ষতি নেই।
কীভাবে হবে পড়াশোনা?
ধরা যাক, ইন্টিগ্রেটেড স্নাতক কোর্সে কোনও পড়ুয়া একইসঙ্গে বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সেখানে কোনও পড়ুয়ার এই বিষয়টি ছাড়াও আগ্রহ রয়েছে অন্য কোনও বিষয়ে। নতুন সিস্টেমে তিনি চাইলে একটি সেমেস্টারের জন্য অন্য কলেজ থেকে অন্য যে কোনও বিষয়ে পাঠ নিতে পারবেন। একইসঙ্গে নিজের কলেজে পড়াশোনার পাঠও চালিয়ে যেতে পারবেন। এমনটাই বলা হচ্ছে জাতীয় শিক্ষানীতিতে। তাঁর জন্য যে আকাদেমিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকবে সেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পাওয়া ক্রেডিট স্কোর যুক্ত হয়ে যাবে।