কলকাতা: বাংলা আর বেনিয়ম। দুই শব্দ যেন ক্রমশ সমার্থক হয়ে উঠছে। একের পর এক দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হচ্ছে। এবার ধরা পড়ল ফের অনিয়ম। সামনে এল চিকিত্সা ক্ষেত্রের বেহাল দশা। যার পর্দাফাঁস TV9 বাংলায়। সুপার এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে ঢিল ন্যাশনাল মেডিক্যালের ঘুঘুর বাসায়।
ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, বা CNMC। সরকারি অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি। অভিযোগ, এই হাসপাতালেই রমরমিয়ে চলছে দুর্নীতি। চিকিত্সাধীন রোগীদের ডিসচার্জের পরেও ভুয়ো বিল ছাপিয়েই এখানে দেদার লুঠতরাজের আখড়া।
কী ঘটেছে?
জানা গিয়েছে, জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই ন্যাশনাল মেডিক্যালের শিশুবিভাগে ভর্তি হয় আরফা-অনুষ্কাদের মত বেশ কয়েকজন শিশু। সপ্তাহ ঘোরার আগেই সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরে তারা। অভিযোগ, এরপরেই শুরু হয় টাকা লুঠের কারবার।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, ডিসচার্জের ৩ দিনের মাথায় গত ১২ সেপ্টেম্বর শিশুদের শ্রবণক্ষমতা যাচাইয়ের পরীক্ষার নামে একের পর এক বিল কাটা হয়। এরপর গত ৩ সেপ্টেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি হয় তিলজলা রোডের আরফা। হাসপাতালের নথিতেই স্পষ্ট ৯ সেপ্টেম্বর ছুটিও হয়ে যায় তার। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর কীভাবে আরফার নামে ‘বেরা’ টেস্টের ভাউচার তৈরি হয়? কূল কিনারা পাচ্ছেন না খোদ স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকরাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ক্যানিং, মুকুন্দপুরের মতো বহু জায়গায় এমন ভুয়ো বিল তৈরি হয়েছে বহু শিশুকন্যার নামে। যার মাসিক কেলেঙ্কারির পরিমাণ স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর ৯ লক্ষ টাকা।
একই অভিজ্ঞতা অনুষ্কা মল্লিক, রুহিনা মোল্লা, মোর্তালিম মোল্লাদের ক্ষেত্রেও। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে হচ্ছেটা কী? তথ্যতালাশে বেরিয়ে তিলজলা রোডে আরফার বাড়িতে পৌঁছেছিল টিভি৯ বাংলা। আরফার মা ইয়াসমিন বেগমের দাবি, তাঁর মেয়ের শ্রবণশক্তি নিয়ে কোনও রকম সমস্যা নেই। ডিসচার্জ ইস্তক আর হাসপাতালমুখোও হননি তাঁরা!
আরফার মা ইসমিন বেগম বলেন, ‘ওর কানের কোনও সমস্যা হয়নি। আমার কাছেই থাকে। আমরা আর যাইনি হাসপাতালে।’ অপরদিকে আরফার বাবা জানান, ‘দুর্নীতি চলছে। এটা ঠিক নয়।’
কীভাবে আরফার নামে ভাউচার তৈরি হল?
উত্তর নেই অডিওভেস্টিবুলার ক্লিনিকের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছেও। টিভি নাইনের প্রশ্নের মুখে পড়ে আরফার অভিভাবকদের ফোনও করেন তিনি। টেস্ট নিয়ে প্রশ্নে দ্ব্যর্থহীনভাষায় আরফার মা সাফ জানালেন, মেয়ের শোনার কোনও সমস্যাই জানা নেই। কোনও পরীক্ষাও হয়নি!
এত বেনিয়ম হচ্ছে কীভাবে?
শ্রবণশক্তির পরীক্ষা পিছু খরচ ১১০০ টাকা। টেস্টের নামে ন্যাশনালে প্রতি মাসে খরচ ১০ লক্ষ। CNMCর চিকিৎসক-স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশের দাবি, কেলেঙ্কারির দায়ে বেসরকারি সংস্থার। তবে শুধুই CNMC-তেই নয়। রাজ্যের প্রায় সবকটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজেই অডিওভেস্টিবুলার ক্লিনিকের বরাতপ্রাপ্ত একই সংস্থা। তবে কি ন্যাশনালের পাশাপাশি অন্যান্য হাসপাতালেও চলছে লুঠতরাজের এই কারবার?
টিভি নাইনের শঙ্কা যে নেহাত্ই অমূলক নয়, মানছেন ন্যাশনালের এভি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাও। তাঁর দাবি, আরফাদের নামে তৈরি ভাউচারের ভিত্তিতে কোনও টাকই নেওয়া হয়নি।
টাকা যদি নাই নেওয়া হয়ে থাকে তবে রোগীর ডিসচার্জের পরেও কীভাবে বেড নম্বর সমেত ভাউচার জমা? এর যদিও উত্তর মেলেনি।