সৌরভ দত্ত: ফের বেনিয়মের অভিযোগ শহরের সরকারি হাসপাতালে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো প্রথম সারির হাসপাতালে দুর্নীতি বা বেনিয়মের অভিযোগ তুললেন খোদ হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ভবানী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। এই সব অভিযোগ জানিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে হাজিরও হয়েছিলেন তিনি। কোনও সাড়া না মেলায় বিশিষ্ট ওই চিকিৎসক ঘনিষ্ঠ মহলে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ওই চিকিৎসকের একটি ‘পত্রবোমা’ প্রকাশ্যে এসেছে। আর সেখানে উল্লেখ রয়েছে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির নাম। ‘অন্যায়’ দাবি মানা না হলে বদলি করে দেওয়া হবে, এমন হুমকিই নাকি দিয়েছেন নির্মল মাজি। বিস্ফোরক এই অভিযোগ সামনে আসতেই সরব হয়েছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ।
চিকিৎসক ভবানী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ্যে অবশ্য কিছু বলতে চাননি তিনি। মুখে কুলুপ নির্মলেরও।
তাঁর চিঠিতে যে সব অভিযোগ রয়েছে, তার সারমর্ম অনেকটা এরকম:
১. ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ২০২টি স্টেন্টের দায়িত্ব নিতে বলা হচ্ছে তাঁকে। অর্থাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া যন্ত্রও নথিভুক্ত রাখতে হবে। বিভাগীয় অডিট নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
২. ইকোডপলার (হৃদযন্ত্র পরীক্ষা করার বিশেষ যন্ত্র) যন্ত্রই নেই বিভাগে। তবুও চারটি ইকোডপলার যন্ত্রের ফিজিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট অর্থাৎ দিতে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ যন্ত্রগুলি ঠিক আছে কি না, তা বলতে হবে তাঁকে।
৩. কার্ডিওলজি বিভাগে যক্ষ্মা রোগী, ডায়ারিয়ার রোগীকে ভর্তির সুপারিশ করা হচ্ছে, যার প্রভাব ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
৪. করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি স্টেন্টিংয়ের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েক মাস ধরে কার্ডিওলজি বিভাগে অমিল টিএমটি (ট্রেডমিল টেস্ট)।
৫. সপ্তাহে তিনদিনও বিভাগে থাকছেন না চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকদের হয়ে হাজিরা খাতায় সই করছেন গ্রুপ বি স্টাফ।
অভিযোগ, এ সব বিষয়ে সরব হওয়ায় গত মার্চ মাসে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিভাগীয় প্রধানকে বদলির হুঁশিয়ারি দেন নির্মল মাজি। এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে গত এপ্রিলে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের সঙ্গে দেখা করে নিজের বক্তব্য জানান ভবানী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা বলেন, ‘যদি সত্যিই যন্ত্র না দেখে সার্টিফিকেট দিতে হয়, চিকিৎসকের জায়গায় যদি সত্যিই গ্রুপ বি স্টাফ সই করেন, তাহলে তা ভয়ঙ্কর অভিযোগ। এমন ঘটনা কোথাও কখনও ঘটেনি। পুরোটা জনসমক্ষে আসা উচিত। সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।’ এই টানাপোড়েনের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্র এই প্রসঙ্গে প্রাথমিকভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানান, তাঁর বিষয়টা জানা নেই। যে চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে সেখানে বিভাগীয় প্রধানের সই নেই বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ভবানী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কখনও কোনও সমস্যা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। তবে অধ্যক্ষ হিসেবে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানকে তিনি বৈঠকে ডেকেছিলেন বলে জানান। তাঁর হাত দিয়ে চিঠি যায়নি বলেই মন্তব্য করতে চাননি তিনি।