কলকাতা: “হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই।” বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের চেক আপের পর জানিয়ে দিলেন মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা। অনুব্রতকে দেখে এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলকে প্রশ্ন করা হয়, ‘অনুব্রতর কি কোনও মানসিক চাপ রয়েছে? তাঁকে দেখে কী মনে হল?’ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “অনুব্রত মণ্ডলকে ভর্তি করানোর প্রয়োজন নেই। ক্রনিক প্রোবলেম রয়েছে। তবে ভর্তির প্রয়োজন নেই। সব রিপোর্ট ওখানে দিয়েছি। স্ট্রেস রয়েছে বলে দেখে মনে হচ্ছে না।”
সোমবারের সকালটা সব খবরই ছিল কার্যত অনুব্রতকে ঘিরে। তিনি কি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না হচ্ছেন না? বেলা ১১টার কিছুটা পর, চিনার পার্কের ফ্ল্যাট থেকে বের হন অনুব্রত মণ্ডল। ১২.২৫ মিনিটে তাঁর কনভয় ঢুকল এসএসকেএম হাসপাতালে। আগে থেকেই কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল হাসপাতাল চত্বর। তাঁর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল উডবার্ন ওয়ার্ডের ২১৬ নম্বর ঘরটি। জেনারেল সার্জন দীপ্তেন্দ্র সরকার, কার্ডিওলজিস্ট সরোজ মণ্ডল, মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র ঘোষ, চেস্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সোমনাথ কুণ্ডুর নেতৃত্বে প্রস্তুত ছিল মেডিক্যাল বোর্ড। সাত জন চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড অনুব্রতর পরীক্ষা করলেন।
অদ্ভুতভাবেই এই বোর্ডের সদস্যরা যখন হাসপাতালে ঢুকছিলেন, TV9 বাংলার ক্যামেরার সামনে এটুকু পর্যন্ত স্বীকার করতে চাননি, তাঁরাই অনুব্রত মণ্ডলের চেকআপ করবেন। অথচ সে খবর আগে থেকেই সংবাদমাধ্যমের কাছে ছিল। অর্থাৎ স্পষ্টতই অনুব্রতর ইস্যুতে একেবারেই সাবধানী ছিল এসএসকেএম।
উডবার্ন ওয়ার্ডের ভিতরে চলছিল অনুব্রতর শরীরের পরীক্ষা নিরীক্ষা। ফিসচুলার সমস্যার পাশাপাশি হার্টের ৭০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন কেষ্ট। স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা তৈরি হচ্ছিল, এবার কি তাঁকে ভর্তি করানো হবে? বেলা ১.৫৩ মিনিট। উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের। চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলকেই ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেমন দেখলেন অনুব্রতকে? তাঁকে কি ভর্তি করানো হচ্ছে? চিকিৎসকের অসম্মতিসূচক উত্তর, ‘ভর্তি করানোর প্রয়োজন নেই…’ জলের স্পষ্ট হয়ে যায় বিষয়টি। অর্থাৎ আগের বারের দেড় ঘণ্টা এবারও দেড় ঘণ্টাই। গত মাসে এসএসকেএম হাসপাতালে এসে দেড় ঘণ্টাই ছিলেন অনুব্রত। এবার এসএসকেএম হাসপাতালে অনুব্রত থাকবেন কতক্ষণ? যে প্রশ্নে সকাল থেকে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, তার উত্তর হল সেই ‘ঘণ্টা দেড়েকই’।
এসএসকেএম কার্যত অনুব্রতর শারীরিক সমস্যার বিষয়ে ক্লিনচিটই দিল বটে! তবে রাজনীতির সমালোচকরা বলছেন, এ যেন উলটপুরাণ। কারণ সপ্তাহ দুয়েক আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইস্যুতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল এসএসকেএমের মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের। সেক্ষেত্রে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল, তা যাচাই হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। ভুবনেশ্বরের ইএসআই হাসপাতালে নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল এসএসকেএমের দেওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মেডিক্যাল রিপোর্ট। কিন্তু অনুব্রতর ক্ষেত্রে আগেই এসএসকেএম স্পষ্ট করে দিল, ‘হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই।’ বিশ্লেষকদের কথায়, সেক্ষেত্রে অনুব্রতর ওপর সিবিআই-এর চাপ আরও বাড়ল।
শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়েই সিবিআই-এর সোমবারের তলব এড়িয়েছিলেন অনুব্রত। বস্তুত সোমবারে বেলা ১১টায় নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল অনুব্রতর। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতাকে হাতিয়ার করেই আজ তিনি এসএসকেএমে। কিন্তু বিশ্লেষকদের কথায়, এই হাতিয়ারও ভোঁতা হল মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টে। সেক্ষেত্রে সিবিআই আগেই স্পষ্ট করেছিল, এসএসকেএমে চিকিৎসার পর তাঁকে হাজিরা দিতে হবে নিজাম প্যালেসে। এবার সিবিআই কী করবে, অনুব্রতই বা কী করবেন, সেটাই দেখার। উল্লেখ্য, গরু পাচারমামলায় ইতিমধ্যেই আসানসোল জেলা আদালতে প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। সেখানে অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের নাম রয়েছে। ফলে অনুব্রতর আরও যে চাপ বাড়ল, বলাই বাহুল্য।