কলকাতা: ‘নাইনে কিছু বলব না…’ গ্রেফতারির পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফের স্বমহিমায় অনুব্রত মণ্ডল। মেয়ের সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন করতেই, TV9 বাংলার বুম ঠেললেন, চেষ্টা করলেন কেড়ে নেওয়ার, তা সজোরে ধাক্কা দিলেন। নিজাম প্যালেসের বাইরে গোটা ঘটনায় অনুব্রত মণ্ডলের কাজে আবারও প্রশ্ন উঠল হাজারও। TV9 বাংলার ওপর কীসের এত রাগ অনুব্রতর? কেন ধাক্কা দিলেন বুমে? কেনই বা বললেন, ‘নাইনে কিছু বলব না…’?
বেলা আড়াইটের কিছুটা বেশি। কমান্ড হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার পর নিজাম প্যালেসে পৌঁছন অনুব্রত মণ্ডল। সাংবাদিকরা আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। গ্রেফতারির পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। প্রশ্ন তৈরি ছিল। সিবিআই-এর সাদা গাড়ি এসে দাঁড়াতেই সাংবাদিকরা তাঁর উদ্দেশে প্রশ্ন করতে থাকেন। গাড়ি থেকে বের হন অনুব্রত, দৃশ্য়ত স্বমহিমায়। এদিন তাঁর ঠোঁটের কোলে ছিল হালকা হাসিও, যা গত কয়েকদিনে ম্রিয়মান ছিল।
বহু সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুব্রতর কানে গিয়েছিল TV৯বাংলার প্রতিনিধি সৌরভ দত্তর প্রশ্নটাই। “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আপনার পাশে রয়েছে, আপনি কিছু বলবেন?” অনুব্রতর সোজাসাপটা উত্তর, ‘নাইনে কিছু বলব না।’ অর্থাৎ TV9 বাংলাকে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি তিনি। এখানেই থামেননি, বললেন, ‘খুশি?’
এরপর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে ভিড় ঠেলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন তিনি। মাঝে তাঁর পায়ের চটি ভিড়ের চাপে খুলে যায়। তিনি চটি ঠিক করছিলেন। সেসময় আমাদের আরও এক প্রতিনিধি সুজয় পাল প্রশ্ন করেন, ‘মেয়ের সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে কিছু বলবেন?’ রীতিমতো রেগে যান তিনি। বাঁ হাত দিয়ে চেপে ধরেন TV9 বাংলার বুম। দৃশ্যত তিনি তা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে।
দৃশ্যটা এমন ছিল, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেও বুম ছাড়েননি তিনি। চোয়াল শক্ত করে ঠোঁট চেপে বুম টেনে ধরে রাখতে দেখা যায় অনুব্রতকে। এই প্রশ্নে কতটা ক্ষুদ্ধ তিনি, তা তাঁর মুখে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে। পরে এক স্টেপ ওঠে যাওয়ায় বিপরীত দিকে (অর্থাৎ সাংবাদিকের দিকেই) ঠেলে সরিয়ে দেন বুম। তার জেরে লোগোটা কিছুটা নেমে যায়।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পর একের পর এক এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট সামনে এনেছে TV9 বাংলা। বোলপুরে আরও সম্পত্তি রয়েছে কেষ্ট-কন্যার,সে তথ্যও সামনে এসেছে। অবশ্যই তা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ীই। ২০২১ সালে বোলপুর এলাকায় পৃথক ৬টি জমি কেনেন সুকন্যা। দুটি জমি বোলপুরের মকরমপুর মৌজায়। চারটি জমি বোলপুর ব্লকের বল্লভপুর মৌজায়। জমি কেনার টাকার উৎস কি? তদন্ত শুরু করেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। এই সম্পত্তি নিয়েই প্রশ্ন করেছিলেন আমাদের প্রতিনিধি। তাতেই অনুব্রত মণ্ডলের এই প্রতিক্রিয়া। যা নিয়ে জোর বিতর্ক।
বিজেপি নেতা অনুুপম হাজরা বলেন, “গতকালই তো ওঁর দলনেত্রী অক্সিজেন দিয়েছেন। দলনেত্রীর ফুল সাপোর্ট পেয়েছেন। তাই ওঁর অক্সিজেন চলাচল ফের স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।”
কিন্তু অনুব্রত কোথায় ভুল করেছেন, সেটাই বুঝতে পারেননি তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, “এটা তাঁর নাগরিক অধিকার। বুম কেড়ে নেননি। আপনারা বুম দিয়েছেন তাঁর সামনে, তিনি সরিয়ে দিয়েছেন। কথা বলা না বলা তাঁর অধিকার। কে গেছেন কার কাছে?”
সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ বলেন, “ওঁ একটা জঙ্গলের বাঘ ছিল, এখন সার্কাসের বাঘ হয়ে গিয়েছে। সেটাই শারীরিক ভঙ্গিতে দেখা গিয়েছে। নিজেরাও পাপ করেছেন, পরিবারের সদস্যদেরও জড়িয়েছেন। অনুব্রতর মেয়ে-স্ত্রী তো দোষ নেই। অনুব্রতই তো ওই পথে এনেছেন। এখন প্রশ্ন করলে রেগে যাচ্ছেন।”