কলকাতা : দিল্লি যাওয়া আটকাতে মরিয়া অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। আর কয়লা-কাণ্ডে অভিযুক্ত নেতাকে যে কোনও অবস্থাতেই দিল্লি নিয়ে যেতে চায় কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। প্রয়োজনে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেও অনুব্রতকে নিয়ে যেতে চায় ইডি। শনিবার কলকাতা হাইকোর্টে এমনটাই সওয়াল করা হল কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে। অনুব্রতর তরফে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে আসানসোল আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। অন্যদিকে, আদালতে করা ইডি-র মৌখিক প্রতিশ্রুতি কেন রেকর্ড করা হল না, সে বিষয়ে অনুব্রতর আইনজীবীকে কার্যত ধমক দেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী।
শুক্রবার অনুব্রত যে মামলা করেন, তার শুনানি শেষ হয়েছে। এদিন অনুব্রতর আইনজীবী কিশোর দত্ত উল্লেখ করেন, দিল্লি হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই মামলা চলছে। দিল্লি আদালত বলেছে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। আইনজীবী প্রশ্ন, আসানসোল আদালতে কীভাবে সিদ্ধান্ত হয়?
একই সঙ্গে অনুব্রতর ফিসচুলার সমস্যার কথাও উল্লেখ করেন আইনজীবী। তিনি জানান, কেন্দ্রের কোনও হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। অনুব্রত স্বাস্থ্য পরীক্ষা রিপোর্ট জমা দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। ১৭ মার্চ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে অনুব্রতর তরফে।
এদিন অনুব্রতর তরফে দাবি করা হয়, দিল্লিতে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইডি একাধিকবার তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও কেন গ্রেফতার করা হল, দিল্লি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনুব্রতর আইনজীবী। আর তা শুনেই আইনজীবীকে ধমক দেন বিচারপতি। মৌখিক নির্দেশ বিচারপতিকে দিয়ে কেন রেকর্ড করা হয়নি? সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বিচারপতি বলেন, ‘হাইকোর্টে অনেক সময় সরকারি আইনজীবী এই আশ্বাস দিয়ে থাকেন। এগুলো হয়ে থাকে। তখন আপনারাই বলেন, মৌখিক নয়, এটা রেকর্ড হোক। আর এই মামলায় চার মাসে আপনারা মৌখিক আশ্বাসেই বিশ্বাস করলেন?’ এই মামলাকে ‘ভেরি হট কেস’ বলে উল্লেখ করে বিচারপতির প্রশ্ন, যেখানে শুরু থেকে বলা হচ্ছে অনুব্রতকে সম্পূর্ণ মিথ্যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে প্রতিপক্ষের কথাই বিশ্বাস করা হল কী ভাবে? বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় যদি বলতেন, তাহলে আপনাদের কথা রেকর্ড হত দিল্লি কোর্টে।’
ইডির পক্ষে আইনজীবী বিল্লদ্বল ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কাউকে ইডি ছাড়বে না। প্রয়োজনে এয়ার এম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা হবে। এইমস দিল্লিতে খারাপ চিকিৎসা হয় বলে মনে হয় না। ইডি সব অভিযুক্তদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত।’ এছাড়া কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হওয়া সত্ত্বেও দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে অনুব্রত ‘ফোরাম শপিং’ করেছেন বা আদালতকে অপমান করেছেন বলে মন্তব্য করেন ইডি-র আইনজীবী।
উল্লেখ্য, অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। পরে ইডি আসানসোলের সিবিআই আদালতে অনুমতি চায়। গত বুধবারই সেই ছাড়পত্র দিয়েছে সিবিআই আদালত। সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়েই তড়িঘড়ি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অনুব্রত।