Trinamool Congress: শুধু পার্থ নয়, আর কোন কোন সতীর্থ জেল ঘুরে জামিনে
TMC Leaders: তোলপাড় চলছিল রোজভ্যালি কেস নিয়েও। ওই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল কৃষ্ণনগরের তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ তাপস পালকে। তিনি ওই সংস্থার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোটা টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল।

তিন বছর তিন মাস। বন্দী দশা কাটিয়ে অবশেষে ঘরে ফিরলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গাড়ির সামনে ফের চেনা ছন্দে স্লোগান দিলেন অনুগামীরা। বাড়ির সামনে উপচে পড়ল ভিড়। রাস্তায় পড়ল পোস্টার। বাড়ি ঢুকতেই বরণ। পার্থর চোখে চিকচিক করল জল। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন এই পার্থ। পঁচিশে জামিন। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীর জেল যাত্রা নেহাৎ কম হয়নি। সারদা, নারদা, রোজভ্যালি, নিয়োগ দুর্নীতি, গরু পাচার — কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি বলুন তো!
সারদা কেস
মদন মিত্র– সারদা থেকে নারদ সব কেসেই জড়িয়েছে নাম। পালা বদলের ঠিক তিন বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর সারদা কেসে সিবিআই তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পরই গ্রেফতার। যদিও গ্রেফতারের পরই অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। ছুটতে হয় হাসপাতালেও। ১১ মাস জেলে থাকার পর জামিন পান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার তিনিই ছিলেন প্রথম মন্ত্রী যিনি যাকে সারদা কেসে গ্রেফতার করা হয়। এই সারদা মামলাতেই ২০১৩ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল কুণাল ঘোষকেও। প্রায় তিন বছর শেষে ৩৪ মাস পর জামিনে হয় জেল-মুক্তি।
রোজভ্যালি কেস
একইসঙ্গে আবার তোলপাড় চলছিল রোজভ্যালি কেস নিয়েও। ওই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল কৃষ্ণনগরের তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ তাপস পালকে। তিনি ওই সংস্থার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোটা টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। সিজিও কমপ্লেক্সে একটানা জেরার পর গ্রেফতার করা হয় ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর। গ্রেফতারের পরই নিয়ে চলে যাওয়া হয় ওড়িশায়। দীর্ঘ ১৩ মাস বন্দি থাকার পর তাঁকে জামিন দেয় ওড়িশার বিশেষ আদালত।
এই কেসে তাপস পালকে গ্রেফতার করার কিছুদিন পরেই গ্রেফতার হয় তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। অর্থাৎ রোজভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার তালিকায় তৃণমূলের দ্বিতীয় সাংসদ। ওই বছরেরই মে মাসে ওড়িশা হাইকোর্টে ২৫ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পেয়ে যান তিনি।
নারদ মামলা
অন্যদিকে আবার তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কিছু বছরের মধ্যেই রাজ্যের রাজনৈতিক আঙিনায় শোরগোল ফেলে দিয়েছিল নারদ কেস। তোলপাড় শুরু হয়ে যায় নারদা স্টিং অপারেশন নিয়ে। শোরগোল ফেলে দেয় ম্যাথিউ স্যামুয়েলের করা একটি স্টিং অপারেশন। ঘুষ নিতে দেখা যায় একাধিক নেতা-মন্ত্রী-সাংসদের। এতেও উঠে এসেছিল মদন মিত্রের নাম। ২০২১ সালে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। পরে জামিন পেয়ে যান। একইরকম ছবি দেখা যায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম, তৎকালীন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। তাঁদের তিনজনকেও নারদ কেসে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে গ্রেফতারের কিছু মুহূর্তের মধ্যেই জামিন পেয়ে যান।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলা
তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। ততদিনে রাজনীতির ময়দানে ঝড় তুলেছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা, গরু পাচার মামলা। ফের জোরদার অ্যাকশন শুরু করে দিয়েছে ইডি, সিবিআই। শুরুতেই বললাম ২০২২ সালে গ্রেফতার পার্থ। ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। গ্রেফতার হওয়ার ২৩ মাস পরে চব্বিশ সালের সেপ্টেম্বরে জামিন পান তিনি।
গরু পাচার মামলা
ওই বছরই গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করা হয় বীরভূমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মণ্ডলকে। পরবর্তীকালে গ্রেফতার করা হয় তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকেও। দু’জনেরই ঠাঁই হয়েছিল দিল্লির তিহাড়ে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জামিন পেয়ে যান সুকন্যা। কিছুদিনের মধ্যে জামিন হয়ে যায় অনুব্রতরও।
রেশন দুর্নীতি মামলা
ও হ্যাঁ আর একজনের কথা না বললেই নয়। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রেশন দুর্নীতি মামলায় ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ইডির গ্রেফতার হয়েছিলেন বালু। গ্রেফতারির সময় বালু ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি ছিলেন খাদ্য দফতরের মন্ত্রী। দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয় তাঁকেও। গ্রেফতারির ১৪ মাস পরে চলতি বছরের শুরুতেই জামিন পেয়ে যান তিনি। আদালত সূত্রে খবর, ২৫ হাজার টাকার জোড়া বন্ড এবং ৫০ লাখ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়কে।
