কলকাতা: একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ সফল করতে তৎপর তৃণমূল নেতত্বে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীদের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ সফল করতে বার্তা দেওয়া হয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে। রবিবার তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে একটি ভিডিয়ো আপলোড করা হয়েছে। সেই ভিডিয়োয় ২১ জুলাইয়ের ইতিহাসের কথা বলতে শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাকে। সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, কুণাল ঘোষ, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো ঘাসফুল শিবিরের প্রথম সারির নেতারা ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের ঘটনার স্মৃতিচারণ করছেন। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিককেও দেখা গিয়েছে সেই ভিডিয়োয়। সে সময় পার্থের পাশে দেখা গিয়েছে বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকেও। পার্থ যখন বলছিলেন তখন পাশে ছিলেন বিশ্বজিৎ। যদিও কোনও কথা বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। বিশ্বজিৎ অতীতে তৃণমূল বিধায়ক থাকলেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হন। কিন্তু তার পর তিনি ফের যোগ দেন ঘাসফুল শিবিরে। গত কয়েক মাসে তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু বিধানসভায় দলত্যাগের প্রসঙ্গ উঠলেই নিজেকে বিজেপি বিধায়ক বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের ভিডিয়োয় তাঁকে দেখা যাওয়ায় ফের মাথাচাড়া দিল বিতর্ক।
সাল ১৯৯৩। তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। তখন পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের নেত্রী তথা সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে জ্যোতি বসুর সরকার। এ সময় সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিং-এর অভিযোগ নিয়মিত শোনা যেত বিরোধীদের মুখে। এমন আবহেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতার ডাকে মহাকরণ অভিযানের জন্য কলকাতার রাজপথে নামেন কয়েক হাজার যুব কংগ্রেসকর্মী। সেই মিছিলের গুলি চালনার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। সে দিন গুলিতে নিহত হন ১৩ জন যুবকংগ্রেস কর্মী। এর পর থেকেই ২১ জুলাই শহিদ সমাবেশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনার আবহে গত ২ বছর সমাবেশ করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর সেই সমাবেশ সফল করত জোর কদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল। সে জন্য প্রকাশিত ভিডিয়োয় বিশ্বজিতকে দেখা যাওয়ায় উঠছে প্রশ্ন।
বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের শাসক দলকে নিশানা করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলের সচেতক মনোজ টিগ্গা। তিনি বলেছেন, “স্পিকারের যদি চক্ষু লজ্জা থাকে তাহলে পাঁচ জনের বিরুদ্ধেই দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরী করে তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজ করবেন। তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলেই তো দল তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছে একুশে জুলাইয়ের জন্য। উনি যদি বিজেপিতে থাকতেন, তাহলে তো তাঁকে একুশে জুলাইয়ে কর্মসূচি করতে তৃণমূল ডাকত না। যে পাঁচ জন বিজেপি বিধায়ক দল ছেড়েছেন, তাঁরাই একুশে জুলাইয়ের জন্য কর্মসূচি করছেন। এর থেকে বড় প্রমাণ আর কি থাকতে পারে, যে বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে তৃণমূলের তথ্যচিত্রে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বজিৎ দাস বিজেপির প্রতীকে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলেই তাঁকে একুশে জুলাইয়ের তথ্যচিত্রে দেখা যাচ্ছে।“ যদিএ এ ব্যাপারে বিশ্বজিতের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।