কলকাতা: আবাসিক-স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফ্ল্যাটবাড়িটি তৈরি হয়েছে ২০১২ সালে। কিন্তু মেয়র ফিরহাদ হাকিম দাবি করলেন, বাঘাযতীনের ওই ফ্ল্যাটবাড়ির তৈরি হয়েছিল ২০০৯ সালে। জলাশয় বুজিয়ে তৈরি হয়েছিল ফ্ল্যাটবাড়িটি। আর সেটা বাম আমলেই হয়েছে বলে দাবি করলেন ফিরহাদ হাকিম। প্রথম থেকেই এই ঘটনায় বামেদের ওপরই দোষ চাপাচ্ছিলেন মেয়র। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে আরও একবার সেই দাবিই করলেন।
বৃহস্পতিবার ভেঙে পড়া আবাসনটি পুরোটাই ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। সেই কাজ পরিদর্শনে যান ফিরহাদ। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “অবৈধ প্রোমোটারির এটাই সমস্যা। ২০০৯ সালে এই বাড়িটা হয়েছিল। এখন অনলাইনে কিছুই নথিভুক্ত নেই। ডিজি বিল্ডিং সেদিনের ঘটনার পর থেকেই অনলাইনে এই আবাসনের প্ল্যান খুঁজছেন। তখন তো অনলাইন ব্যবস্থা ছিল না। তখন ম্যানুয়াল প্ল্যান জমা হত। সেই ফাইলটাই পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সময় এটাই চাল ছিল সব কলোনিতে, নিজেদের মতো করে কোঅপারেটিভ করে বাড়ি করে নিল। পরে এল প্রোমোটার চক্র। এবার অনেকে প্রোমোটারের চক্রে পড়ে বাড়িগুলো কিনলেন। গার্ডেনরিচেও এই সমস্যা রয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমরা আসার পর আইন শিথিল করে, কারণ এখানে নাকি বিএলআরও-র পারমিশন পাওয়া দুস্কর ছিল, সেই বিষয়গুলো দেখা হয়েছে। সেই অফিস, ঠিকা অফিস, কলকাতা কর্পোরেশনের আন্ডারে নিয়ে এসে চেষ্টা করেছি, যাতে হয়রানি কমে, সহজে প্ল্যান পাওয়া যায়। এখানে এখন বেশির ভাগ নির্মীয়মান বাড়িতে দেখবেন, পারমিট নম্বর টাঙিয়ে বাড়ি করছেন।”
কিন্তু সমস্যা একই জায়গায়। ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাই বলছেন, ওই ফ্ল্যাটবাড়িটি তৈরি হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৪ সালে তাঁরা ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন। তাঁর দাবি, ফ্ল্যাট কিনে আসার ঠিক দুই বছর পরেই দেখা যায়, আবাসনের দক্ষিণ দিক বেঁকে হেলে গিয়েছে। তারপর প্রোমোটারের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলেন তাঁরা। প্রোমোটার প্রথমে এক লক্ষ টাকা করে দাবি করেছিলেন ফ্ল্যাট ওনার্সদের কাছ থেকে। কিন্তু কেউ তা দিতে রাজি হয়নি। পরে প্রোমোটার তাঁদের আশ্বস্ত করেছিলেন, টাকা লাগবে না, তবে ফ্ল্যাটের কোনও সমস্যা হলে দায় থাকবে ওনার্সদের। বাকি তিনি সব ঠিক করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। প্রোমোটার এরপর ‘নায়াগ্রা কনস্ট্রাকশন’ বলে একটি সংস্থাকে নিয়ে আসেন। এই সংস্থা দিয়েই কাজ করানো হয়। আর তা নিয়েই বিপত্তি।
কিন্তু ফিরহাদ যে গোটা বিষয়টি নিয়ে বামেদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন, তাতে বিশেষ আমল দিতে নারাজ বামেরাও। প্রাক্তন বাম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের নাকি দূরবিন দিয়ে দেখা যায় না, এখন সব জায়গায় বামফ্রন্টের ভূত দেখছেন। মেয়র ভুলে গিয়েছেন, এই নির্মাণ শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। তখন ওঁর দল পৌরসভায় চলে এসেছে। জলাভূমি ভরাট করে নির্মাণ ওঁরাই করেছিলেন।”