কলকাতা: বঙ্গ বিজেপির অন্দরে বিদ্রোহের আঁচ বেশ কিছুদিন ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। এ বার, সরাসরি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ প্রকাশ বঙ্গ বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের। অভিযোগ, বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এখনও চালু করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। গত ২৭ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উপমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই একটি লিখিত বয়ানে লোকসভাতে জানান, যে সংশোধনী আইন (CAA) বিধি তৈরির জন্য সময় বাড়ানো হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হয়েছে ১২ ডিসেম্বর ২০১৯-এ। কিন্তু পর পর চারবার বিধি তৈরির জন্য সময় চেয়েও কেন্দ্রীয় সরকার তা পালনে ব্যর্থ হল বলেই অভিযোগ।
বঙ্গ বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বিধি তৈরি না করার জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এখনও প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অহেতুক বিলম্বের ফলে উদ্বাস্তুরা বিভিন্ন আইনি সমস্যায় পড়েছেন, পুলিশের হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন, কর্মক্ষেত্র থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে…সব ব্যাপারেই তাঁরা বিপদে পড়ছেন। …সম্প্রতি অপ্রত্যাশিতভাবে কৃষি আইন প্রত্যাহারের পর উদ্বাস্তু সমাজ আজ এই আতঙ্কে ভুগছেন যে আদৌ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু হবে কি না।”
প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব সংশোধনী ইস্যুতে এর আগে একাধিকবার সরব হয়েছে মতুয়া শিবিরও। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল। নেপথ্যে ছিল নাগরিকত্ব ইস্যু। যদিও মতুয়া-ভোটেও ভাগ বসাতে পেরেছিল তৃণমূল। ভোটপর্বে সিএএ ইস্যু নিয়ে বার বার বদলেছে সিদ্ধান্ত। কখনও বলা হয়েছে ভোট মিটলেই সিএএ চালু হবে, কখনও বলা হয়েছে সিএএ এনআরসি চালু হবেই না। পাল্টা, তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, বঙ্গে কোনওভাবেই এনআরসি-সিএএ চালু করা হবে না। নির্বাচনের পরেও সিএএ চালু হয়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মতুয়া সাংসদ তথা অধুনা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সিএএ নিয়ে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তাঁর স্পষ্ট দাবি, কেন সিএএ এখনও চালু হচ্ছে না, তা কেন্দ্রের স্পষ্ট করা দরকার।
বস্তুত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে একটি মূল ইস্যু ছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। সেই আইন নিয়ে বঙ্গে চালু হবে না, এ কথা বরাবর জানিয়ে এসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বাংলা ছেড়ে কাউকে যেতে হবে না। কারণ, বাংলায় যাঁরা রয়েছেন তাঁরা বাংলারই বাসিন্দা। নতুন বছরে, ফের বঙ্গ বিজেপির তরফে সিএএ ইস্যুর প্রসঙ্গটি উঠে আসায় প্রশ্ন উঠছে। শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে বিজেপির অন্দরের সাংগঠনিক দৃঢ়তা নিয়েও। যদিও, এই নিয়ে বিজেপির তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।