কলকাতা: বিজেপির নবান্ন অভিযান পর্ব মিটে গিয়েছে। ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেদিন। পুলিশ-বিক্ষোভকারী খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছিল সেদিন কলকাতা ও হাওড়া। কিন্তু সেই ঘটনার রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। আঁচ ছড়িয়েছে দিল্লি পর্যন্তও। নবান্ন অভিযানের দিন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দলীয় স্তরে কমিটি তৈরি করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। নবান্ন অভিযান নিয়ে গত দু’দিন ধরে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। শুক্রবার এই বিষয়ে রাজ্য বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনল বিজেপির পরিষদীয় দল। স্পিকার তা পাঠ করতে দিলেন বিজেপিকে। তা পড়লেন কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও। কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা চাইলেন না তাঁরা।
এদিন বিধানসভার অন্দরে যা দেখা গেল, তাতে কার্যত নমো নমো করে প্রস্তাব পড়েই দায় সারলেন বিজেপি পরিষদীয় দল। অথচ পড়ার সময়ে পুলিশি বলপ্রয়োগ, কর্মীদের উপর পুলিশের লাঠি, কাদানে গ্যাসের শেল, জল কমানোর প্রসঙ্গ এল। বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে কর্মসূচি শুরুর আগে যেভাবে আটকে দেওয়া হয়েছিল সেই প্রসঙ্গও ছিল প্রস্তাবে। শুভেন্দু অধিকারীর উপরে বলপ্রয়োগের মতো বিষয়ও উঠে এসেছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও আলোচনা চেয়ে টু শব্দও করলেন না বিজেপির বিধায়করা। আর নবান্ন অভিযান নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব যখন পড়ছেন বিধায়ক, সেই সময়ে কক্ষে হাজির মাত্র ১২ জন বিজেপি বিধায়ক। এমনকী যাঁরা প্রস্তাবে সাক্ষর করেছিলেন, তাঁদেরও অনেকের দেখা মিলল না।
এই বিষয়ে বিজেপি বিধায়ক তথা বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গার অবশ্য বক্তব্য, “১২ ও ১৩ তারিখ স্পেশাল ট্রেন দিলেও আসার আগে অনেককে আসতে দেয়নি পুলিশ। টিকিট পরীক্ষকের ভূমিকা নিয়েছিল পুলিশ। অনেকে আসতে পারেনি। ১৩ তারিখ পুলিশ বর্বরের মত কাজ করেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা মুলতুবি প্রস্তাব রেখেছি। আমরা রেকর্ড করিয়েছি। আমাদের কথা রেজিষ্টার্ড করতে পেরেছি। লড়াই চলছে ,লড়াই চলবে।”
আর এই মুলতুবি প্রস্তাবে অন্যতম স্বাক্ষরকারী বিধায়ক বিষ্ণু প্রসাদ শর্মা বলেন, “প্রস্তাব যখন আমরা জমা দিয়েছি, তখন আমরা আলোচনা চাইছি বলেই জমা দিয়েছি। রাজনীতিতে মুড একটা বিষয়। কাল যা মুড ছিল, আজ তা নাও থাকতে পারে।”
পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়ে বলেন, “এটা পরিষদীয় নিয়মের অঙ্গ। মুলতবি প্রস্তাব যদি কেউ আনেন, তা বিরোধী দলকে পড়তে দেওয়া হয়। এটাই নিয়ম। পড়ার পর সেটা আলোচনার দাবি করে বিরোধীরা। কিন্তু আজকে দেখলাম, তাঁরা কোনও আলোচনা চাইলেন না। এমনকী যখন তাঁরা পড়ছিলেন, তখন তাঁদের নির্দিষ্ট সদস্য সংখ্যাও ছিল না।” পাশাপাশি খোঁচা দিলেন শুভেন্দু অধিকারীকেও। বলেন, “একজন বিরোধী দলনেতার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ওর মধ্যে কোনও উপলব্ধি নেই। উনি পরিষদীয় রীতিনীতি জানেন না। তাই বারবার ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যান।”