দমদম: জ্বর হয়েছিল। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দক্ষিণ দমদম পৌর হাসপাতালে। সেখান থেকে আরও দুই হাসপাতালে। তারপর মৃত্যু হয় সৃজন সাহা নামে বছর এগারোর ওই নাবালকের। তার মৃত্যুতে দক্ষিণ দমদম পৌর হাসপাতালের বিরুদ্ধে পরিষেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মৃতের পরিজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া হয়নি। মৃতের পরিবারের অভিযোগ খারিজ করে দক্ষিণ দমদম পৌরসভা জানিয়েছে, ভর্তি করা হলেও প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হতে পারে, এ কথা শুনেই নাবালককে ভর্তি করেনি পরিবার।
দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামনগর দাস ভিলা এলাকায় বাড়ি সৃজনের। ক্লাস ফাইভে পড়ত সে। পরিবারের বক্তব্য, তাদের সন্তানের জ্বর হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রক্তের নমুনা পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। এরপর শুক্রবার সকালেই দক্ষিণ দমদম পৌর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার দক্ষিণ দমদম পৌর হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে কোনওরকম চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়নি। উল্টে পরিষেবা দিতে পারবেন না জানিয়ে সৃজনকে অন্যত্র ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপরই ওইদিন সৃজনের পরিবার তাদের সন্তানকে নিয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যায়। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসা পরিষেবা ঠিকমতো দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তাদের অভিযোগ, বেলেঘাটা আইডিতে সামান্য স্যালাইনটুকু দেওয়া হয়নি। আইডি-তে থাকাকালীন প্লেটলেট দেড় লক্ষ থেকে ৪০ হাজার নেমে যায়। ওইদিন ভোর রাতে নাবালকের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এরপরে শনিবার সকালে ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সৃজনকে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু হয়৷ সৃজনের মাসির অভিযোগ, ঠিকমতো পরিষেবা না পাওয়ায় সৃজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে ঠিকমতো পরিষেবা পাওয়া যায়নি। তাঁরাও চিকিৎসকদের অন্দোলনকে সমর্থন করেন। কিন্তু তাঁদের মত অসহায় মানুষের দিকে তাকানো উচিত। মুমূর্ষু রোগীদের পরিষেবা দেওয়া উচিত।
মৃত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পৌর হাসপাতালে কোনওরকম পরিষেবা দেওয়া হয়নি। দু’বার করে তারা পৌর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, তারা পরিষেবা দিতে পারবে না। তাদের পরিকাঠামো নেই। সৃজনের মায়ের দাবি, দক্ষিণ দমদম পৌরসভার পৌর হাসপাতালে পরিষেবা মেলেনি। তার সঙ্গে বেলেঘাটা আইডি-তে পরিষেবা না মেলায় তিনি সন্তানহারা হলেন।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেন দক্ষিণ দমদম পৌরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাস। বলেন, “ওই নাবালকের মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু, অভিযোগ সত্যি নয়। ১ সেপ্টেম্বর নাবালকের জ্বর আসে। ২ তারিখ ডাক্তার দেখানো হয়। ৫ তারিখ রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। আমাদের এখানে যখন আনা হয়েছিল, তখন তার গায়ে ব়্যাশ বেরিয়ে গিয়েছে। যেহেতু ব়্যাশ বেরিয়ে গিয়েছিল, সেজন্য ভর্তির সময় বলা হয়েছিল, যদি প্রয়োজন হয়, তখন রেফার করা হতে পারে। প্রেসক্রিপশন লেখা হয়ে গিয়েছে। ভর্তির কথা লেখা হয়ে গিয়েছে। তারপরও ওই নাবালকের পরিবার জানায়, তারা এখানে ভর্তি করাবে না। তখন বেলেঘাটা আইডি-তে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তারপর তারা বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যায়। ভর্তির সময় সব জায়গায় বলা হয়, প্রয়োজন পড়লে রেফার করা হতে পারে।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)