সৌরভ দত্ত: পরিসংখ্য়ান বলছে, ভারতে ২৫ শতাংশেরও বেশি মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তা পরীক্ষা করার বিষয়ে অনেকে অবগত থাকলেও, আগে থেকে আক্রান্ত সম্ভাবনার কথা জেনে, উপযুক্ত করার কথা হয়ত ভাবতেও পারেন না মধ্যবিত্ত বাঙালি। বছর কয়েক আগে এমনই এক চিকিৎসা করিয়েছিলেন হলিউডের অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ঝুঁকি এড়াতে তাঁর স্তন বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর এই চিকিৎসা কার্যত নজির গড়েছিল। আর এবার সেই একই চিকিৎসা পেলেন কলকাতার বাসিন্দা এক মহিলা। সাফল্যের সঙ্গে স্তন বাদ দেওয়াই শুধু নয়, সেই স্তন পুনর্গঠনও করা হয়েছে। না, কোনও বেসরকারি হাসপাতালের ব্য়য়বহুল চিকিৎসা নয়। এই সাফল্যের দাবিদার এসএসকেএম হাসপাতাল।
অ্যাঞ্জেলিনা শুধু নিজের স্তন নয়, বাদ দিয়েছিলেন নিজের ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবও। এ ক্ষেত্রেও কলকাতার ওই মহিলারও ডিম্বাশয় বা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে, স্তন ক্যানসারে অনুঘটকের কাজ করতে পারে বিআরসিএ-১ জিন বা ব্রাকাজিন। কোনও মহিলা যদি বিআরসিএ-১ পজিটিভ হন তাহলে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্তন ক্যান্সার রোধে হলিউডের নায়িকা যে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পেয়েছিলেন, বাংলার সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায়, তা যেন রূপকথা! সেই রূপকথাকেই বাস্তবে এনে দেখাল ব্রিটিশ-বঙ্গ চিকিৎসকদের যৌথ উদ্যোগ।
কলকাতার বাসিন্দা বছর ২৭-এর মহিলার বিআরসিএ-১ জিন পজিটিভ হওয়ায় ডানদিকের স্তন এবং ডিম্বাশয় বাদ দেওয়া হয়েছে। সিলিকন প্রস্থেসিসের সাহায্য কৃত্রিম স্তন প্রতিস্থাপনও করা হয়েছে।
এসএসকেএমের এই সাফল্যে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল বলে মনে করছেন চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি যে চিকিৎসা করাতে পারেন তা যে বাঙালি মধ্যবিত্তের পক্ষেও সম্ভব এসএসকেএম তা দেখিয়ে দিয়েছে। ব্রিটেনের প্রবাসী ভারতীয় চিকিৎসকদের সাহায্যে স্তন পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে ডিম্বাশয়ও। স্তন পুনর্গঠনের সময় ম্যাট্রিক্স নামে একটি চিকিৎসা প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। এই পদ্ধতি ভারতে এই প্রথম ব্যবহার করা হল।
ব্রিটেনের বাঙালি চিকিৎসক সুমোহন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিদেশে যা সম্ভব, সেটা কলকাতায় সম্ভব করে দেখিয়েছেন তাঁরা। যে শহরে তাঁদের বেড়ে ওঠা, সেখানে এমন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পেরে খুশি তিনি।
সাধারণত যতজনের স্তন ক্যান্সার হয়, তার মধ্যে ৫-৮ শতাংশের ব্রাকাজিন মিউটেশন হয়ে থাকে। মাংসপিণ্ড বা লাম্প চাক্ষুষ হওয়ার আগেই কোনও মহিলার ব্রাকাজিন পজিটিভ রয়েছে কি না তা চিহ্নিত করে স্তন পুনর্গঠন করা যায়।
সারা বিশ্বের মধ্যে ম্যাঞ্চেস্টারে প্রথম স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের কাজ শুরু হয়। সেই দলে ছিলেন চিকিৎসক সুমন চট্টোপাধ্যায়, চিকিৎসক অমিত আগরওয়াল। তাঁরাই প্রথম এই কাজ করলেন এসএসকেএমে। কলকাতার চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই কাজ করেছেন তাঁরা।