কলকাতা: শীর্ষ আদালতে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর আবেদনের পর হাইকোর্টে কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেল হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম মামলার শুনানি। সূত্রের খবর, হাইকোর্ট থেকে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে সরানোর আবেদন জানিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। সেই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টে শুনানি স্থগিত রাখার আবেদন জানান বিরোধী দলনেতা। বিচারপতি শম্পা সরকারের এই বেঞ্চে এই আবেদন জানানো হলে তিনি মামলাটির শুনানি নভেম্বর মাস পর্যন্ত পিছিয়ে দেন। একই সঙ্গে এই মামলায় মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আদালতে জরিমানা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মমতার আইনজীবী।
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম মামলাটি সবার প্রথম উঠেছিল বিচারপতি কৌশিক চন্দের ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আবেদন জানানো হয় যেন এই মামলাটি অন্য বিচারপতির বেঞ্চে সরিয়ে দেওয়া হয়। বহু বাক বিতণ্ডার পর অবশেষে মামলাটি ছেড়ে দেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ। কিন্তু মামলাটি ছেড়ে দেওয়ার সময় বিচারপতি তোপ দেগে বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত করা হয়েছে।’ সেই মর্মে তাঁকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। শুভেন্দুর আইনজীবী জানতে চেয়েছিলেন, আদৌ সেই জরিমানা জমা দেওয়া হয়েছে কি না! তার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী জানান, জরিমানার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চ এ দিন নন্দীগ্রাম মামলার শুনানি পিছিয়ে দেয়। মামলাটির পরবর্তী শুনানি ১৫ নভেম্বর রয়েছে বলে খবর।
হাইকোর্টে মামলাটি কয়েকমাসের জন্য পিছিয়ে যাওয়ায় তা পরোক্ষে শুভেন্দু অধিকারীর জন্যই লাভদায়ক হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একই সঙ্গে মামলাটি অন্য আদালতে স্থানান্তরিত হলে তাতেও পরোক্ষে শুভেন্দু অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যেতে পারেন বলে মত আইনজীবী মহলের।
প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর জয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ফলাফল পুনর্গণনার দাবি নিয়ে করা এই মামলার শুনানি কৌশিক চন্দের এজলাসে ওঠায় তা নিয়ে বেজায় অসন্তুষ্ট হয় তৃণমূল শিবির। এই মামলার শুনানি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে হোক, তা আগাগোড়াই চাননি মমতা। এর কারণ হিসেবে দাবি করা হয়, কৌশিক চন্দকে একাধিক সময় বিজেপির নানা অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। তিনি ‘বিজেপি মনোভাবাপন্ন’ বলেও দাবি করে তৃণমূলের আইনজীবী সেল। ফলে যে মামলাটি খোদ বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে, তার শুনানি কৌশিক চন্দের এজলাসে হলে নিরপেক্ষ রায় নাও হতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল তৃণমূল নেত্রীর।
সেই মতো দিনদুয়েক শুনানির পর অসন্তুষ্ট হয়েই মামলাটি ছেড়ে দেন কৌশিক চন্দ। তবে মামলাটি ছাড়ার আগে যে কড়া বাক্যবাণ প্রয়োগ করেন, তা একপ্রকার নজিরবিহীন বললেও কম হয়। বিচারপতি বলেন, বিচারব্যবস্থাকে ‘কলুষিত করা হয়েছে’। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। আরও পড়ুন: রাজ্যের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য নয়! কোভিডের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে আনতে বলল আদালত