কলকাতা: উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষক। ২০১৪ সালের প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ারও ছিলেন। অথচ ইংরেজিতে প্রশ্ন শুনে বললেন, “ইংরেজি জানি না বাংলায় বলব।” রুদ্ধদ্বার শুনানিতে বিচারপতিকে এমনই জবাব দিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে শুক্রবার হাইকোর্টে এসে ‘গেট আউট’ শুনতে হল ওই ইন্টারভিউয়ারকে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রীতিমতো তিরস্কার করে তাঁকে এজলাস থেকে বের করে দেন। যা নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, তিনি আর স্কুলে শিক্ষকতা করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে এদিনই বোর্ডকে সুপারিশপত্র পাঠাবেন বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) সংক্রান্ত মামলায় নজিরবিহীন পদক্ষেপ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। ২০১৪ সালের প্রাথমিকের চাকরির জন্য যাঁদের কাছে ইন্টারভিউ দিতে হয়, সেই পরীক্ষকদের আদালতে ডেকে একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং। আদালতের রুদ্ধদ্বার কক্ষে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৩০ জন পরীক্ষককে। তাঁদের মধ্যেই একজন হলেন এদিন ‘গেট আউট’ শোনা ওই ইন্টারভিউয়ার। বিচারপতি তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, ইংরেজি জানি না বাংলায় বলব। এরপরই তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন, অথচ ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না! ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এটুকু যোগ্যতা নেই, তিনি কি ইন্টারভিউ নেবেন?”
এরপর এদিন পুনরায় ওই মামলার শুনানিতে সেদিনের সমস্ত ইন্টারভিউয়ারদের সঙ্গে ওই পরীক্ষককেও দেখা যায়। অন্যান্য়দের মতো তিনিও এদিন এজলাসে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর তাঁকে দেখেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রীতিমতো ভর্ৎসনার সুরে বিচারপতি তাঁকে দেখা মাত্রই বলেন,’গেট আউট।’ বিচারপতির একথা শোনার পরেও অবশ্য ওই ইন্টারভিউয়ার এজলাস ছাড়েননি। তখন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “শেরিফ ডেকে বের করে দেব।” এরপরই ওই ইন্টারভিউয়ার এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান।
ওই ইন্টারভিউয়ার বেরিয়ে যাওয়ার পর এজলাসে উপস্থিত পর্ষদের আইনজীবীকে বিচারপতি তাঁকে (ওই ইন্টারভিউয়ার) উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করেন,”চিনতে পারছেন?” পর্ষদের সভাপতির অবশ্য ইংরেজিতে কথা বলতে না পারা ওই ইন্টারভিউয়ারকে চিনতে অসুবিধা হয়নি। তিনি সেকথা জানালে বিচারপতি ফের ওই ইন্টারভিউয়ারের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সেজন্যই তাঁকে এজলাস থেকে বের করে দেওয়া হল বলে জানান। তবে এভাবে কারও কথা না শুনে তাঁকে একেবারে ‘গেট আউট’ বলে এজলাস থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বের করে দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪-র টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সংগঠিত হয় সেখানে অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপ্টিটিউট টেস্টই নেওয়া হয়নি এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে নম্বর বিতরণ করা হয়েছে বলে মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ। তার ভিত্তিতেই গত মঙ্গলবার ইন্টারভিয়ারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন বিচারপতি স্বয়ং।