কলকাতা: সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখা করেছিলেন আরজি করে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে। তিনি সময় চেয়েছিলেন। রবিবার পর্যন্ত যদি রাজ্য পুলিশ কেস সলভ করতে না পারে তাহলে সিবিআই-কে এই কেস দিয়ে দেওয়া হবে। তবে রবিবারের আগেই বড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
এ দিন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ আরজি করের কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আজ মামলাকারীর আইনজীবীরা বারবার সওয়াল করেন, যত সময় নষ্ট হবে তত প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা থাকবে। সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সিবিআই-কে এই মামলার সব নথি হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি উল্লেখ করেছেন, ‘রাইট নাও’ অর্থাৎ অবিলম্বে সিবিআই এই তদন্ত শুরু করবে। বুধবার সকাল দশটার মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবং মামলার নথিপত্র আজই গোয়েন্দা আধিকারিকরা নিজেদের সংগ্রহ করবেন।
এই মামলার নির্দেশ দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে পুলিশি গাফিলতি স্পষ্ট রয়েছে, প্রমাণ নষ্ট হতে পারে, সর্বপরি ‘রেয়ার অব দ্য রেয়ার’ কেসের ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। এ দিন গোটা মামলাটিকে প্রধান বিচারপতি ‘পিক্যুলিয়ার কেস’ বলেন। এজলাসে তিনি বলেছেন, “এটা যদি অন্য রকম ঘটনা হত তাহলে রিপোর্ট চাইতাম।” তবে এটায় কোনও রিপোর্ট নয়। মামলা সোজাসুজি চলে গিয়েছে সিবিআই-এর হাতে। শুধু তাই নয়, নির্দেশের পরই প্রধান বিচারপতি সিবিআই আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এক্ষুনি কেস ডায়রি নিয়ে নিন। এক্ষুনি তদন্ত শুরু করুন”
আজ প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, সন্দীপ ঘোষ ছুটির আবেদন করলে অবিলম্বে তা গ্রহণ করতে হবে। এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না। পাশাপাশি আন্দোলনরত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যেও বার্তা দিয়েছে কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, “আমরা সব চিকিৎসকদের মনের অবস্থা অনুভব করছি। তারপরও যারা সরকারি হাসপাতালে আসছেন তাদের বিষয় বিবেচনা করবেন। অ্যাজিটেশন কনসিডার করুন।”
এই প্রসঙ্গে আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী বলেন, “কোর্ট তদন্তের বেশ কিছু অংশ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল। পাঁচদিন হয়ে যাওয়ার পর তদন্তের বেশি কিছু অগ্রগতি নেই। কোর্ট সন্দীপ ঘোষের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে। রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামোকে ভর্ৎসনা করেছে। এই মামলার তদন্তে রাজ্য পুলিশ ফেল করেছে। তাই কোর্ট সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোর্টের নজরদারিতে হবে এই তদন্ত। আমি আদালতে বলেছি মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সিবিআই তদন্তের কথা বলেছেন। তবে এজলাসে দেখা গেল ভিন্ন অবস্থান। তারা সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে কথা বলছে।” কৌস্তভ আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ঘটনার পরের দিন বললেন সিবিআই-এ আপত্তি নেই। তারপর বললেন সাতদিন চাইছি। আমরা বলেছিলাম এই সাতদিন কি প্রমাণ লোপাটের জন্য? কোর্ট সব শুনেছে।”