কলকাতা : কল্যাণী আদালত চত্বরই ছিল তার বাসভবন। সেখানে বড় হওয়া। আইনজীবী থেকে বিচারক, সবাই তাকে ভালবাসে। তাঁরাই তার দেখাশোনা করত। আচমকা একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে গেল সবার আদরের ‘ঘনা’। তাকে খুঁজে দিতে মামলা হয় কল্যাণী এসিজেএম আদালতে। ঘনাকে খোঁজার জন্য নির্দেশ দেন বিচারক। তারপরও পাওয়া যায়নি তাকে। শেষপর্যন্ত মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court)। ওই মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকার আজ পুলিশের ভূমিকায় বিরক্তি প্রকাশ করলেন। ‘ঘনা’কে খুঁজতে নির্দেশ দিলেন পুলিশ সুপারকে।
এই ‘ঘনা’ হল একটি শূকরছানা। ছোট থেকেই সে বেড়ে ওঠে কল্যাণী আদালত চত্বরে। আইনজীবী থেকে বিচারক, সকলের স্নেহেই বেড়ে ওঠে সে। সকলে তাকে ‘ঘনা’ বলে ডাকেন। হাইকোর্টে আবেদনের বয়ান অনুযায়ী, গত ২৫ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ একটি সাদা গাড়ি ঢোকে আদালত চত্বরে। গাড়ি থেকে নামে ৪ জন। তারাই ঘনাকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে সেই ছবি ধরা পড়েছে। এই ঘটনায় কল্যাণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আইনজীবী অনুমিতা ভদ্র। মামলাও হয় কল্যাণী এসিজেএম আদালতে। আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক নির্দেশ দেন, যেভাবেই হোক ঘনাকে খুঁজে আনতে হবে। তারপর কেটে গিয়েছে কয়েকমাস। কিন্তু এখনও ঘনার হদিশ পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার মামলার শুনানিতে বিচারপতি শম্পা সরকার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। পুলিশি তদন্ত নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ঘনাকে খুঁজতে পুলিশ কি আদৌ তৎপর? কল্যাণী থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। পুলিশের পদক্ষেপে খুশি নন তিনি।
সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, অভিযোগের ভিত্তিতে কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রিভেনশন অফ অ্যানিমেল অ্যাক্টে অভিযোগ আনা হল না? যে গাড়িতে ঘনাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই গাড়ির ভিডিয়ো থাকলেও কেন অপহরণকারীরা চিহ্নিত হয়নি?
কল্যাণী থানার তদন্তকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন বিচারপতি। পুলিশ সুপারের নজরদারিতে ঘনাকে খোঁজা হবে। একইসঙ্গে বিচারপতি নির্দেশ দেন, দ্রুত তদন্ত করে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া কল্যাণী আদালতে নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে। এদিন মামলাটির নিষ্পত্তি করে দেন বিচারপতি শম্পা সরকার।