কলকাতা ও হুগলি: টিভি নাইন বাংলার খবরের জের। নদী গর্ভে তলিয়ে যেতে বসা জিরাটের স্কুলের খবর টিভি নাইন বাংলায় দেখে নড়েচড়ে বসল কলকাতা হাইকোর্ট। কী করে ওই প্রাইমারি স্কুল চলছে, তা দেখে বিস্মিত বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। রেজিস্ট্রার জেনারেলকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি।
গ্রামের একটা স্কুল যে কত বিপজ্জনকভাবে চলতে পারে, তা এই ঘটনা না জানলে বিশ্বাস হবে না। হুগলির রানিনগরের চয়খয়রামারির প্রাথমিক স্কুল। গঙ্গার ভাঙনে প্রায় তলিয়ে যেতে বসেছে প্রাথমিক স্কুলটি। আতঙ্কে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোই বন্ধ করে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চলছে গঙ্গার ভাঙন। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে জিরাট গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্লভপুর, রানিনগর ও গৌরনগরে ভাঙন চলছে। তার মধ্যে গৌরনগর মৌজার এখন কার্যত অস্তিত্বই নেই। অন্যদিকে, দুর্লভপুর ও রানিনগর মৌজার দুটি গ্রাম চরখয়রামারি ও খাসেরচরেও তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। বাঁধ দেওয়া হচ্ছে, তবে তাতে লাভ কিছুই হয়নি। রাক্ষসের ভাঙনের গ্রাসের মুখে আস্ত একটি স্কুল।
চরখয়রামারি স্কুল ভাঙনের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। লকডাউনের সময়ে স্কুলের পাশে অঙ্গণওয়াড়ি কেন্দ্র ভাঙনের কবলে চলে যায়। ১৯৪৯ সালে স্কুলভবন তৈরি হওয়ার সময়ে স্কুল থেকে গঙ্গার দূরত্ব ছিল ২ কিলোমিটার। এখন গঙ্গার থেকে স্কুলের দূরত্ব মাত্র কয়েক ফুট। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নতুন স্কুলভবন তৈরি করার ক্ষেত্রে উদাসীন প্রশাসন। আগে প্রাথমিক স্কুলে ৬২ জনের বেশি পড়ুয়া ছিল। ভাঙনের ভয়ে এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৫০-এ। পড়ুয়াদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন অভিভাবকরা। লক্ষ লক্ষ টাকা বালির বস্তা আর পাইলিং করে স্কুলটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কাজ কী হচ্ছে? আতঙ্কেই চলছে স্কুল।
এক অভিভাবক বলেন,”বাচ্চাটাকে স্কুলে পাঠিয়ে তো শান্তি নেই। সবসময় ভয় লাগে। নদীতে পড়ল নাকি কে জানে!” হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দী বলেন, “এক ব্যক্তি স্কুল কাউন্সিলকে স্কুল খোলার জন্য জায়গা দান করেছেন। ইতিমধ্যে জায়গায় হুগলি স্কুল কাউন্সিলের নামে রেজিস্ট্রিও হয়ে গিয়েছে। টাকাও আমাদের কাছে এসে গিয়েছে। কাজের টেন্ডারও চলছে। টেন্ডার প্রসেসিং শেষ হলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
বিষয়টি ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্রার জেনারেলকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন।