কলকাতা: ছাত্র বিক্ষোভের জেরে কয়েক দিন আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (Visva Bharati University)। সেই বিতর্কের রেশ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আদালতের নির্দেশে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়, তেমনই বিশ্বিবদ্যালয়ের সমস্ত গেট খোলা রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও পক্ষই আদালতের নির্দেশ সর্বাংশে মানেনি, এমন অভিযোগ-ও উঠেছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে চলা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) পর্যবেক্ষণ, “বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছে বেশকিছু বহিরাগত।”
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার পর্যবেক্ষণ, “ছাত্রদের বুঝতে হবে যে এই রাজনীতির কারবারিরা নিজেদের স্বার্থে তাদের ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।” তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছে কিছু বহিরাগত। বিচারপতি মান্থা আরও বলেন, “এসব করার আগে যে কাজের জন্য তাঁরা বিশ্বভারতী-তে আছেন অর্থাৎ, পঠন-পাঠন তার ওপর জোর দেওয়া উচিত। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের যে এই ধরনের একটা বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে ক্রমাগত নিচের দিকে টেনে নামানোর চেষ্টা হচ্ছে। এতে কোনও পক্ষই তার দায় অস্বীকার করতে পারে না।”
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। বিচারপতি বলেন, উপাচার্য এবং প্রশাসনিক কর্তাদের আরও অনেক নমনীয়তার সঙ্গে অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে।”
এদিকে বরখাস্ত হওয়া তিন পড়ুয়া অভিযোগ করেছিলেন তাঁদের এখনও ক্লাস করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের ক্লাস করতে না দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনেন তা খারিজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিচারপতি জানান,
নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তাঁরা আবারও ক্লাস করতে পারবেন। একইসঙ্গে সাসপেন্ড হওয়া অধ্যাপকদের বিষয়টিও বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনরায় বিবেচনা করতে হবে বলে জানায় আদালত।
উল্লেখ্য, তিন পড়ুয়া এবং অধ্যাপকের সাসপেন্ডের প্রেক্ষিতে আন্দোলন চরমে ওঠে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তীকে টানা ছয় দিন ঘেরাও করেন পড়ুয়ারা। অচলাবস্থা জারি হয় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। বিক্ষোভের জেরে মামলা গড়ায় আদালতে। সংশ্লিষ্ট মামলায় বিচারপতি রাজশেখর মান্থা জানান, “উপাচার্য আইনের উর্ধ্বে নন।” বহিষ্কৃত তিন পড়ুয়াকে অবিলম্বে ক্লাসে ফেরানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
সেই নির্দেশ অনুসারে, শুক্রবার রাতেই ৩ বহিষ্কৃত পড়ুয়াদের ক্লাসে যোগ দিতে দেওয়ার জন্য় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়ে অধ্য়ক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের চিঠি দিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) প্রোক্টর শঙ্কর মজুমদার। কিন্তু, সোমবারের পর গোটা একদিন কেটে গেলেও ক্লাসে যোগ দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিন বহিষ্কৃত পডুয়া। এই মর্মে, মঙ্গলবারই আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন বহিষ্কৃত ছাত্র সোমনাথ সৌ।