কলকাতা: ফোনের ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ফোন ভেবে তৎপরতার সঙ্গে কল রিসিভ করেন ভাইস চেয়ারম্যান। কিন্তু ফোন ধরতেই মহিলা কণ্ঠ। পরিচয় দেন সোফিয়া নামে! অথচ ডিসপ্লে নাম ভাসছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের! তাহলে ব্যাপারটা কী! সন্দেহ হওয়ায় দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে ফোন করেন ভাইস চেয়ারম্যান। আর তাতেই রোমাঞ্চকর ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
ঘটনাটা ঠিক কী?
গত শুক্রবার রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম সরকারের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের ডিসপ্লেতে নম্বর অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নাম দেখা যায়। ফোন তুলে কথা বলেন। ভাইস চেয়ারম্যানের বয়ান অনুযায়ী, ফোনের অপর প্রান্তে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে সোফিয়া চক্রবর্তী নামে এক মহিলা কথা বলতে থাকেন। তাঁর জমি নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। তা মিটিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন। সন্দেহজনক ফোন মনে হয় ভাইস চেয়ারম্যানের। তখন অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে ফোন করে বিষয়টি জানান তিনি। তখনই বোঝা যায়, সেটি ‘ফ্রড কল’। কেউ নম্বর ক্লোন করে ফোন করেছেন।
শনিবার শেক্সপিয়ার সরণি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দিল্লি থেকে এসেছে সেই ফোনটা। এরপর দিল্লি রওনা দেয় কলকাতা পুলিশের গুন্ডাদমন শাখা। সেখানে সোফিয়া নামে ওই মহিলার খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায় তিনি রূপান্তরকামী।
এরপর সোফিয়াকে গ্রেফতার করতে গিয়ে কলকাতা পুলিশকে হয়রানির স্বীকার হতে হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি দিল্লি পুলিশ-ও কলকাতা পুলিশকে সাহায্য করেনি বলে দাবি লালবাজারের। রবিবার দিল্লির ময়দানগরি থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে বিমানে আনার পরিকল্পনা করা হয়।
দিল্লি থেকে কলকাতা নিয়ে আসার সময় সোফিয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পরনের জামাকাপড় খুলে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি। বিমান কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের গালিগালাজ করতে থাকেন বলে অভিযোগ। সেই রাতের বিমানে তোলা সম্ভব হয়নি। পরের দিন সকালে একই কাণ্ডের জেরে একেরপর এক বিমান ছেড়ে দিতে হয়। এইভাবে দুইদিন কাটলেও বিমানে আনা সম্ভব হয়নি। সূত্রের খবর, ওই কাণ্ড দেখে বিমান কর্মীরাই বিমানে যেতে রাজি হননি।
শেষমেশ দিল্লি থেকে গাড়িতে বসিয়ে অভিযুক্তকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে অভিষেক চৌধুরী নামে আইটিতে কর্মরত এক বন্ধুকে দিয়ে অভিষেকের নম্বরটি ক্লোন করিয়েছিলেন সোফিয়া। ওই বন্ধুকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ওই নম্বরটি অভিষেকের ব্যক্তিগত নম্বর ছিল না। সেটি অফিসের জন্য ব্যবহার করা হত। অভিযুক্ত সোফিয়ার দাবি, তাঁর বাবা পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেছেন। ওই সম্পত্তির ভাগ পেতেই অভিষেকের নম্বর ক্লোন করে ফোন করেছিলেন। এদিন ধৃত দু’জনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ২১ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত দেন বিচারক।