কলকাতা : বিচারব্যবস্থার ১ শতাংশের বিরুদ্ধে দিন দুয়েক আগে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এমনকী, নাম না করে অভিষেকের সমালোচনা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিচারপতিদের নিয়ে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যের অভিযোগে মামলা দায়ের হল। আজ কলকাতা হাইকোর্টের দুই আইনজীবী স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণের আর্জি জানান হাইকোর্টে। হাইকোর্ট দুই আইনজীবীকে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়। দুপুর দুটোয় মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা।
শনিবার হলদিয়ায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভা থেকে‘বিচার ব্যবস্থার ১ শতাংশকে’ নিশানা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “আমার বলতেও লজ্জা লাগে, বিচারব্যবস্থার এক-দু’জন এমন আছেন, যাঁরা সম্পূর্ণ যোগসাজশ করে কাজ করছেন, তল্পিবাহক হিসেবে। এক শতাংশ এমন আছেন, কিছু হলেই যাঁরা সিবিআই দিয়ে দিচ্ছেন। খুনের ঘটনাতেও স্টে (স্থগিতাদেশ) করে দিচ্ছেন। খুনের ঘটনায় আদালত নিরাপত্তা দিতে পারে অভিযুক্তকে কিংবা সাক্ষীকে। আপনার যদি মনে হয়, সত্যি কথা বলার জন্য আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, আমি ক্যামেরার সামনে এমন কথা ২ হাজার বার বলব, ১০ হাজার বার বলব। সত্যি কথা বলতে আমার বিবেকে বাধে না।”
অভিষেকের এই মন্তব্যের সমালোচনা করে বিরোধীরা। অভিষেকের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। গতকাল শিলিগুড়িতে অভিষেকের নাম না করে সমালোচনা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। একজন সাংসদ সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। রাজ্যপালের মন্তব্যের জবাব দিতে দেরি করেননি অভিষেক। টুইটে তিনি লেখেন, কে সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছে, মানুষ জানে।
আজ সকালে মুর্শিদাবাদে অভিষেককে আক্রমণ করে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “রায় বিরুদ্ধে গেলেই কেন্দ্রের হয়ে যায়। সব আদালতের বিচারকদের ভয় দেখিয়ে রেখেছে। আমাদের জামিন দেয় না। পুলিশ বাড়ির চাকরের মতো। যেকোনও কিছুতে আমাদের কেস দিচ্ছে। মড়া পোড়াতে গেলেও কেস দিচ্ছে। উনি চাইছেন, হাইকোর্টও ওঁদের কথা শুনুক। কিন্তু, কেন শুনবে? হাইকোর্ট হাইকোর্টের মতো চলছে।”
অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতর যখন বাড়ছে, তখন আজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন দুই আইনজীবী কৌস্তভ বাগচি ও আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিষেক অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ কেন বিচারপতিদের উদ্দেশে এই মন্তব্য করেছেন ? একজন সাংসদ হয়েছে তিনি কি এটা করতে পারেন, এই প্রশ্ন তোলেন দুই আইনজীবী। আদালতকে তাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণের আর্জি জানান। দুই আইনজীবীকে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয় হাইকোর্ট। দুপুর দুটোয় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।