কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত এগিয়েছে অনেকটাই। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এবার সেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই। বুধবার আদালতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে। কতজন অযোগ্য প্রার্থী চাকরি করছেন, সেই তালিকা চাওয়া হয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা কাছে। এ দিন রিপোর্টে সেই তালিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে তদন্তকারী সংস্থা।
১. ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা ও দিল্লিতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। একজন কর্মীর বাড়ি থেকে তিনটি হার্ড ডিস্ক উদ্ধার হয়।
২. নবম ও দশমের নিয়োগ মামলায় ৯০৭ জনের ওএমআর শিট জালিয়াতি করা হয়েছে।
৩. হার্ড ডিস্ক থেকে যে তথ্যা পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যাঁরা শূন্য, এক বা দুই পেয়েছেন, এসএসসি-র খাতায় দেখা যাচ্ছে তাঁদের প্রাপ্তি ৫০, ৫৩ ইত্যাদি।
৪. সাদা খাতা জমা দিয়েছে এমন প্রার্থীদের নামের পাশেও বসেছে ৫৩ নম্বর। এসএসসি-র সার্ভারে সেই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সুবীরেশ ভট্টাচার্য সেই সময় চেয়ারম্যান ছিলেন।
৫. গ্রুপ ডি নিয়োগে ২ হাজার ৮২৩ জনের নম্বর বদল করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে সিবিআই।
৬. সার্ভার থেকে জানা গিয়েছে, গ্রুপ সি-কে ৩ হাজার ৪৮১ জনের নম্বর বদল হয়েছে।
৭. সিবিআই জানিয়েছে, ধৃতরা মুখ খুলতে চাননি। কারণ তাঁরা জানেন সিবিআই থার্ড ডিগ্রি ব্যবহার করে না। এমনকী একজন ভয়েস স্যাম্পেল দিতেও রাজি হননি।
এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ধৃত কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্যদের বাকিদের নাম বলতেই হবে। যাঁরা এই জালিয়াতি করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের নাম বলতে হবে।
সেই সঙ্গে বিচারপতি আরও বলেন, যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা নিজেরা পদত্যাগ করলে ভাল, নাহলে বরখাস্ত করার পাশে অন্য পদক্ষেপ করা হবে।
এ দিন দুটি মামলার রিপোর্ট দেখে বিষ্মিত বিচারপতি। ববিতা সরকার ও অনিন্দিতা বেরা মামলার রিপোর্ট দেখেন বিচারপতি। আরও দুটি রিপোর্টেও একই জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
আদালতের নির্দেশ, বোর্ড অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কমিশনের সঙ্গে একটা বৈঠক করবে। কারা শূন্য পেয়েও চাকরি পেয়েছে ওই বৈঠকে দেখা হবে। সব রিপোর্ট রেজিস্টার জেনারেলের দায়িত্বে থাকবে।
যাঁদের বেয়াইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁদের কাছে আদালতের আবেদন, হয়ত টাকা বা অন্য কিছু দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। ৯ নভেম্বরের মধ্যে তাঁরা যেন পদত্যাগ করেন।
কমিশন তাঁদের ওয়েবসাইটে এটি বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি করবে। এদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। যদি না পদত্যাগ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত। সিবিআই-এর প্রশংসা করে বিচারপতির দাবি, এই তদন্তে খুব ভাল কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘মাস্টারমাইন্ডকে খুঁজে বের করতে বলব। সমাজের জন্য এই কাজ তারা করবে।’ আগামী ১৬ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি।