নয়া দিল্লি: রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য সরাসরি ডিভিসি-কেই দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, এই বন্যা ম্যান মেড। বৃহস্পতিবারই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ডিভিসির সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখবেন কি না, ভেবে দেখবেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই তত্ত্ব মানতে নারাজ কেন্দ্র। জল শক্তি মন্ত্রকের তরফে সাফ জানানো হল, রাজ্যকে জানিয়েই জল ছেড়েছে ডিভিসি।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে ম্যান মেড বন্যার কথা শোনা গিয়েছিল। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন, যারা মাইথন, পাঞ্চেত বাঁধ নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের যেমন জল ছাড়ার জন্য দোষারেপ করেন, একই সঙ্গে কেন্দ্রকেও দুষেছিলেন তাদের দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ডিভিসির জলে ভেসে যাচ্ছে বাংলা। আমি জানি না কেন্দ্র কেন ডিভিসির সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলছে না। কেন্দ্রের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য বাংলাকে কেন ভুগতে হবে? এটা পশ্চিমবঙ্গের জল নয়। এটা ঝাড়খণ্ডের জল যা পাঞ্চেত বাঁধ থেকে আসছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির জবাবে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে তরফে জানানো হয়েছে যে ডিভিসি সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেই জল ছেড়েছে। পাঞ্চেত ও মাইথন বাঁধ নিয়ন্ত্রণ করে ডিভিসির যে কমিটি, তাতে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রতিনিধিও রয়েছেন। তাদের জানিয়েই জল ছাড়া হয়েছে। এমনকী, আবহাওয়ার পরিবর্তিত প্যাটার্ন সম্পর্কেও নিয়মিত অবগত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আর জল ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না বলেই ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মাইথন ও পাঞ্চেত বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়েছিল। বাঁধের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই জল ছাড়া হয়েছিল।
জলশক্তি মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, মৌসম ভবন জানিয়েছিল, ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বরাকর-দামোদর অববাহিকা জুড়েই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ১৬ ও ১৭ তারিখের হঠাৎ বৃষ্টিতে পরিস্থিতি খারাপ হয়। বাঁধের জলস্তর বাড়তে থাকে।
বন্যার জন্য ডিভিসির পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড সরকারকেও দুষেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রকে কিছুটা পাশে পেয়েছেন তিনি। জলশক্তি মন্ত্রক জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ড সরকারের তেনুঘাট বাঁধ থেকে ৮৫০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এই বাঁধটি ডিভিসির অধীনে নেই। ঝাড়খণ্ড সরকারকে বহুবার বলা হয়েছিল এই জলাধারকে ডিভিসির অধীনে আনতে, কিন্তু তা শোনেনি হেমন্ত সোরেনের সরকার।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ০,৬৬৪ কিউসেক জল ছেড়েছিল ডিভিসি। পরে সন্ধ্যায় মাইথন-পাঞ্চেত থেকে প্রায় ২৫০,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই জল ছাড়ার পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে ডিভিসি। গতকাল, ১৯ সেপ্টেম্বর ডিভিসি ৮০,০০০ কিউসেক ছেড়েছে বলেই জানা গিয়েছে।