কলকাতা: নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এ বার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই মামলা হয়েছে। হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে এই মামলা দায়ের হয়েছে বলে খবর সূত্রের। শুক্রবারই এই শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, নন্দীগ্রামের ফলাফল নতুন করে গণনার দাবি জানিয়ে এই মামলা করা হয়েছে।
নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর কাছে ১৯০০-র কিছু বেশি ব্যবাধানে ভোটে হেরে গিয়েছিলেন মমতা। যদিও প্রথমে ঘোষণা করা হয় যে মমতা ১২০০ ভোটে জিতেছেন। কিন্তু, কিছুক্ষণ পরই শুভেন্দু অধিকারীকে জয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। গোটা বিষয়টি নিয়ে গোড়াতেই কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়েছিল তৃণমূলের পক্ষ থেকে। এ বার খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো নজিরবিহীনভাবে এই মামলা দায়ের করলেন শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে।
গত ২ মে ফল প্রকাশের পরই মমতা বলে রেখেছিলেন যে এই নিয়ে তিনি আদালতে যাবেন। সে সময় মনে হচ্ছিল, তৃণমূল এই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। কিন্তু খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জয়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে হাজির হবেন, তা এক কথায় ছিল কল্পনাতীত। পুর্নগণনার দাবির পিছনে একাধিক যুক্তি খাড়া করা হয়েছে তৃৃণমূলের তরফে। প্রথমত, গণনার সময় কেন্দ্রে আচমকাই দু’ঘণ্টার জন্য সার্ভার চলে গিয়েছিল। ফলাফল আপডেট হচ্ছিল না। এটা একটা খটকার জায়গা তৃণমূলের জন্য। দ্বিতীয়ত, প্রথমে ১২০০ ভোটে জয়ী ঘোষণার পরও নতুন করে গণনা করে শুভেন্দুকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। কী ভাবে এমনটা হতে পারে? এটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন তৃণমূলের। কারণ, যদি পোস্টাল ব্যালট বাদও দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে ৮০০ ভোটে জয়ী হওয়ার কথা মমতার। কারণ নন্দীগ্রামে পোস্টাল ব্যালটের সংখ্যা ছিল ৪০০।
টানটান উত্তেজনার মধ্যেই ১৭ রাউন্ড ভোটগণনার পর জয়ী হয়েছিলেন মমতা। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফলাফল উল্টে যায়। কমিশনের তরফে জানানো হয়, মমতা হেরেছেন। প্রায় ১৯০০ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন শুভেন্দু। সেই সময়ই পুর্নগণনার আবেদন জানানো হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার জানিয়ে দেন, আর পুর্নগণনা হবে না।
আরও পড়ুন: সময়ের আগেই শাহি-ভবনে রাজ্যপাল, দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে এল এক লাইনের টুইট
সূত্রের খবর, শুক্রবার সকাল ১১ টায় বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে মামলাটি উঠবে। মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা; দুই তরফের আইনজীবী হাজির থাকবেন শুনানিতে। ভিডিয়ো কনফারেন্সেই এই মামলার শুনানি হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ব্যক্তিগতভাবে তিনি অন্য কারোর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, এহেন নজির গত ১০ বছরে নেই বললেই চলে। আরও একটা বিষয় এই মামলার মাধ্যমে কার্যত স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে যে ‘তিক্ততা’ ইদানীং সৃষ্টি হয়েছে তা কম হওয়ার সম্ভবনা তো নেই-ই, উত্তরোত্তর তা আগামী সময় বৃদ্ধি পেতে চলেছে। যেভাবে নন্দীগ্রামের বিধায়ক বারংবার মমতাকে ‘নন এমএলএ মুখ্যমন্ত্রী’ বলে খোঁচা দিয়েছেন, সেই কটাক্ষে এই মামলা দাঁড়ি টানতে পারে কি না, সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
আরও পড়ুন: দ্বিগুণ চাঁদা দিতে হবে তৃণমূল বিধায়কদের, দলের কোষাগার ভরতে সিদ্ধান্ত নেতৃত্বের