কলকাতা: সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে হেরিটেজ বাধা হতে পারে না। সোমবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এমনই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এপ্রসঙ্গে নাম না করে কেন্দ্রকেও একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “যদি হেরিটেজ ভবন উড়িয়ে নতুন পার্লামেন্ট, রেল ভবন হতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে হেরিটেজ বাধা হবে কেন? হেরিটেজ কমিশন তো আমাদেরই কমিশন!”
এদিন নবান্নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের বৈঠকে মূলত কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সম্প্রসারণ নিয়েই হেরিটেজ ভবনের প্রসঙ্গ ওঠে। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল হেরিটেজ ভবন। সেটিই হাসপাতালের ভবন সম্প্রসারণে বাধা হচ্ছে। এপ্রসঙ্গে নাম না করে কেন্দ্রকে খোঁচা দিয়ে মমতা বলেন, “যদি হেরিটেজ ভবন উড়িয়ে নতুন পার্লামেন্ট, রেল ভবন হতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে হেরিটেজ বাধা হবে কেন? হেরিটেজ কমিশন তো আমাদেরই কমিশন!”
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র নেতা শমীক ভট্টাচার্য। এপ্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকো ভবনে তৃণমূল কার্যালয় গড়ে তোলার ঘটনার কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এদের কাছে রবীন্দ্রনাথের কোনও মর্যাদা আছে বলে হয় না। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, বিবেকানন্দ- যা কিছু আছে, সমস্ত ধ্বংস হয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “যে ঘরে প্রথম দেখা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্কিমচন্দ্রের, সেই ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে সরিয়ে দিয়ে সেটাকে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় বানিয়ে দিয়েছে। এরা থাকলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।”
প্রসঙ্গত, এদিনই হেরিটেজ ভবন রক্ষা নিয়ে বিশেষ রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর বাড়ি অর্থাৎ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভবনে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয় ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। এমনকি ওই বাড়িতে গড়ে ওঠা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশের নির্মাণও ভাঙতে হবে বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই অংশের নির্মাণ পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হেরিটেজ বিভাগকেও। পাশাপাশি পুনরুদ্ধারের পর মহর্ষী ভবনকে ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’ বলে আলাদা করে চিহ্নিত করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও এদিন তৃণমূলের তরফে সওয়াল করা হয়, “ওই ঘরে আগে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় ছিল। এখন তৃণমূলের রয়েছে।” এপ্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “হেরিটেজ বিল্ডিং না হলেও কি যে কেউ গিয়ে যে কোন জায়গায় দলীয় কার্যালয় বানিয়ে ফেলতে পারে?” তাঁর আরও বক্তব্য, “পুলিশের উচিত কার্যালয় বন্ধ করে ওই ঘর রবীন্দ্রভারতীকে ফিরিয়ে দেওয়া।” তিন সপ্তাহের মধ্যে পুরসভাকে কড়া পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় যে শাসকদলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা বলা বাহুল্য।