কলকাতা : যে রোগীর মৃত্যুতে অস্বাভাবিক বলে দাবি করেছিলেন চিকিৎসকেরা, সেই মৃত্যুই ৪৮ ঘণ্টা পর হয়ে গেল ‘স্বাভাবিক’। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটল এমন ঘটনা। গত ১১ ডিসেম্বর এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় আরজি করে। এরপরই ডেথ সার্টিফিকেটে দেহে আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ বদলে যায়। এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে মস্তিষ্কে টিউমারের উপসর্গ নিয়ে আরজি করে ভর্তি হন জয়নগরের বাসিন্দা রহমাতুল্লাহ ঘরামি (৪৩)। পরের দিন অর্থাৎ ১১ তারিখ বিকেল পাঁচটা নাগাদ হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়, ‘রেসপিরেটরি ফেলিওর ইন কেস অব পলিট্রমা’। পলিট্রমা অর্থ দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ফলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করতে প্রয়োজন ময়নাতদন্তের। সেই মতো ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যায়। তাতে রোগীর পরিজনেরা আপত্তি জানায়।
রোগীর পরিজনদের বক্তব্য ছিল, মস্তিষ্কে টিউমারের উপসর্গ নিয়ে তাঁরা রোগীকে ভর্তি করিয়েছিলেন। কোনও দুর্ঘটনা বা মামলা হওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে কেন ময়নাতদন্ত? বিতর্কের মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে টালা থানাকে পরবর্তীতে লেখা একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তা, নিউরো সার্জারির বিভাগীয় প্রধানের চিঠিতে মৃত্যু স্বাভাবিক বলেই উল্লেখ করা হয়।
৪৮ ঘণ্টা আগে যে রোগীর মৃত্যুর কারণ অস্বাভাবিক বলা হয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টা পরে সেই রোগীরই মৃত্যুর কারণ স্বাভাবিক জানিয়ে টালা থানাকে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তরফে বলা হয়েছে, পরিট্রমা নয়, রোগীর মৃত্যুর কারণ মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ।
আরও একটি চমকপ্রদ বিষয় হল, প্রথমবারের ডেথ সার্টিফিকেটে যে দুই চিকিৎসকের সই ছিল, মঙ্গলবার সেই দুই চিকিৎসকই নিজেদের লেখা ডেথ সার্টিফিকেটকে কার্যত অস্বীকার করেছেন। এর ফলে ভুক্তভোগী রোগীর পরিজনেরা। ৪৮ ঘণ্টা পর দেহ নিয়ে জয়নগরের পথে রওনা হয়েছেন তাঁরা। দায় কার? সংবাদমাধ্য়মের সামনে মুখে কুলুপ কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কর্তাদের সাফাই হল, ট্রমায় ভর্তি হলে পুলিশে মামলা হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। রোগীর আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত আটকানোরও চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আরজি করের চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, বিষয়টি এত সহজও নয়।