কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালের (RG Kar Medical College and Hospital) কর্মশালায় দেহ কাটাছেঁড়ার বিতর্কে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্যের চিকিৎসক মহল। অভিযোগ উঠেছে, আর জি করে ইএনটি’র কর্মশালায় এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারির প্রশিক্ষণে ব্যবহার হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য আসা পাঁচটি দেহ। আইন কানুনকে শিকেয় তুলে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কীভাবে সম্ভব এমন কাজ? এইসব প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করে দিয়েছে। আর জি করের এই বিতর্ক সবার আগে প্রকাশ্যে এনেছিল টিভি নাইন বাংলাই। এবার আরও এক বিস্ফোরক নথি টিভি নাইন বাংলার হাতে। এমন কিছু যে হতে পারে, তা নিয়ে সতর্কবার্তা আগে থেকেই ছিল, এমন তথ্যই উঠে আসছে।
টিভি নাইন বাংলার হাতে এসেছে গত বছরের ২১ ডিসেম্বরের একটি চিঠি। বিতর্কিত সেই প্রশিক্ষণ শিবিরের জন্য দেহ চেয়ে আর জি করের ফরেন্সিক মেডিসিনের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান সোমনাথ দাসকে এই চিঠি পাঠিয়েছিলেন ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ওটোল্যারিঙ্গোলজিস্টে’র সম্পাদক স্নেহাশিস বর্মণ। তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান সোমনাথ দাস তাঁর নোটে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশের কাছ থেকে আসা দেহ কোনও ভাবে কর্মশালার জন্য দেওয়া সম্ভব নয়।
গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে একটি বদলি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। সেই নির্দেশিকার হাত ধরে সোমনাথ দাসের পরিবর্তে আরজিকর ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান হন প্রবীর চক্রবর্তী। এরপর ৩০ ডিসেম্বর আর জি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কাছে নতুন করে কর্মশালার জন্য দেহ চেয়ে আবেদন করেন ইএনটি’র বিভাগীয় প্রধান ইন্দ্রনাথ কুণ্ডু। সেই আবেদনেই কি সাড়া দেন নতুন বিভাগীয় প্রধান প্রবীর চক্রবর্তী?
ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান প্রবীর চক্রবর্তী অবশ্য গতকাল বল ঢেলে দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে। বলছেন, এই বিষয়ে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষই বলবে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, অনিয়মের সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও কার নির্দেশে তা উপেক্ষা করা হল? সোমবার অধ্যক্ষের প্রশাসনিক কার্যালয় অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানের মন্তব্য কি ইঙ্গিতবাহী? প্রশ্ন উঠছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের প্রথমে অফ ক্যামেরা বক্তব্য ছিল, এমন কিছু ঘটেছে বলে তাঁর জানা নেই। যদিও পরে স্বাস্থ্য ভবনের থেকে কৈফিয়ৎ তলবের পর তিনি জানান, ডিএমই, হেলথ সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলে তারপর তিনি এই বিষয়ে যা বলার বলবেন।
পোষ্টমর্টেমের জন্য মৃতদেহ রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে। স্বাস্থ্য দফতরের কোনও এক্তিয়ার নেই ওই মৃতদেহের উপরে। ফরেন্সিক চিকিৎসক ও ডোমদের স্বরাষ্ট্র দফতর ভাড়া নেয় ময়নাতদন্ত করার জন্য এবং তার জন্য তারা স্বরাষ্ট্র দফতরের থেকে পৃথক টাকা পান। কাজের সুবিধার জন্য পুলিশ মর্গ কোনও হাসপাতালে করা হলেও, আসলে ঐ মর্গ পুলিশ ডিপার্টমেন্টের। যেমন মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে ওই মর্গ কলেজের থেকে অনেকটাই দূরে। আর রোগী ভর্তি হলেই যেমন তার উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যায় না, সেক্ষেত্রে রোগীর বা তাঁর নিকট আত্মীয়র সম্মতি প্রয়োজন হয়, এক্ষেত্রেও তাই। এছাড়াও পুলিশ ও আদালতের নির্দেশও প্রয়োজন।