কলকাতা: বাংলা ভাষায় অন্য ভাষার ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে আপত্তির কথা শুনিয়েছেন শুভাপ্রসন্ন (Subhaprasanna)। ‘দাওয়াত’ বা ‘পানি’-র মতো শব্দগুলিকে বাংলায় ব্যবহারে আপত্তির কথা শুনিয়েছিলেন তিনি। তথাকথিত তৃণমূলপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত শুভাপ্রসন্নের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) স্বয়ং। আর সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। পরে এক সংবাদমাধ্যমকে শুভাপ্রসন্ন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নাকি ‘রাজনৈতিক অসুবিধার’ কারণে বিরোধিতা করেছিলেন। এই বিতর্কের আবহে আরও ঘৃতাহুতি হয় বৃহস্পতিবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) এক মন্তব্য। ঝাঁঝালো ভাষাতেই বুঝিয়ে দেন, ‘অত্যন্ত বাড়াবাড়ি’ করছেন শুভাপ্রসন্ন।
তৃণমূল মুখপাত্র তথা দলের রাজ্য সম্পাদক এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘শুভাপ্রসন্ন যদি সত্যিকারের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভানুধ্যায়ী হন, তাহলে তাঁর উচিত এই অবাঞ্ছিত মন্তব্যগুলি বন্ধ করা।’ সঙ্গে আরও একধাপ এগিয়ে বাঁকা খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের দলের কারও ওনার সঙ্গে কথা বলা উচিত, ওনার কোনও জমি বা কমিটির পদ লাগবে কি না… তাহলে সব ঝামেলাগুলো মিটে যায়।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন সময় থেকেই বহু বুদ্ধিজীবী মানুষ, তাঁর লড়াইয়ের সঙ্গে ছিলেন। তাঁর আন্দোলনকে সামনে থেকে দেখেছেন। পা মিলিয়েছেন মমতার সঙ্গে। তেমনই একজন হলেন শুভাপ্রসন্ন। তৃণমূলপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তাঁর। কুণাল ঘোষের মুখে এমন কথা শুনে বেশ মর্মাহতই শুভাপ্রসন্ন। বললেন, ‘কুণাল আমার অতি কাছের ও পরিচিত। ওকে আমি আর কী বা বলব? আমি কী করেছি, বা কী পেয়েছি, তা সবাই জানে। এ বিষয়ে এর থেকে বেশি কিছু আর আমার বলার নেই। আর ৭৬ বছর বয়সে এসে আমি আর কী নেব? আমি যা ত্যাগ করেছি, তা সবাই জানেন।’
এদিকে কুণাল ঘোষের এদিনের মন্তব্যের পর থেকেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি কমিটিতে পদ পাইয়ে দিলেই বা জমি পাইয়ে দিলেই কি মুখ বন্ধ করিয়ে দেওয়া যায়? কী ভাবছেন শহর তিলোত্তমার বুদ্ধিজীবী মহল? নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি সরাসরি এই বিষয়ে কিছু মুখ না খুললেও তিনি বলছেন, ‘শুভাপ্রসন্ন সত্যিই মমতার নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় এবং পরবর্তী সময়ে নানান ভাবে মমতার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আমি জড়িত নই।’
কুণাল ঘোষের এই কথায় আপত্তি রয়েছে আবুল বাশারেরও। তিনিও বলছেন, ‘এই কথাটা শুনতে ভাল না।’ এদিকে তৃণমূল মুখপাত্রর এই মন্তব্য়ের কড়া সমালোচনা করেছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘এটা একেবারেই শাসক দলের নিজস্ব ব্যাপার। এই নিয়ে আমার কিছু বলা উচিত নয়। তবে, যেভাবে লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ্য়ে চলে আসছে, তা শাসক দলের পক্ষেও ভাল নয়। বাংলার বর্তমান ভবিষ্যতের পক্ষেও ভাল নয়। শিল্পীদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে এবং শাসন কর্তাদেরও এই বিষয়ে নজর দিতে হবে।’