কলকাতা: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্টোবরেই ফের উর্ধ্বমুখী হবে করোনা (Corona) গ্রাফ। ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের ভয়ও আছে। প্রশাসনও সাবধানী। তাই পুজোর মরসুমে রয়েছে নানা নির্দেশিকা। করোনা আবহে গত বারের মতো এবারও পুজো মণ্ডপে ঢোকা নিষেধ। ফলে রাস্তা থেকেই চলবে প্রতিমা দর্শন। এদিকে যানজট ও ভিড় নিয়ন্ত্রণকে মাথায় রেখে পুজোর আগে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সেরে ফেলেছে কলকাতা পুলিশ। প্রশাসন সাবধানী, মানুষও তো ‘ইতিবাচক’। তাই দু’ ডোজ ভ্যাকসিন, মুখে মাস্ক, শারীরিক দূরত্ববিধি, দূর থেকে মণ্ডপ দর্শন- এ সব ভেসে গেল শ্রীভূমির ‘বুর্জ খলিফা’ দেখার ভিড়ে।
শ্রীভূমির দুর্গাপুজো। কলকাতার এই বহুল প্রচারিত পুজোর মূল উদ্যোক্তা ক্লাব কর্তা তথা দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। মহালয়া থেকেই সেই শ্রীভূমি মণ্ডপ চত্বরে ভিড় উপচে পড়েছে। এবার সেখানে থিম বুর্জ খলিফা। শ্রীভূমির দুর্গা প্রতিমাকে সাজানো হয়েছে ২০ কোটি টাকায়। ভিড় যে হবে তা আগেই অনুধাবন করেছিল পুজো কমিটি। ভিড় সামলাতে তাই প্রচুর ভলান্টিয়ারের সঙ্গে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবারের যে জনপ্লাবন দেখা গেল তাতে করোনা-ও হয়ত মুখ লুকোলে বাঁচে। এদিকে এই ভিড়ে কে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, কার মুখে মাস্ক আছে নাকি, গলায় মাদুলি হয়ে ঝুলছে, এ সব প্রশ্ন ধৃষ্টতা মনে হতে পারে।
ভিড় করে আসা এই দর্শনার্থীদের মন্তব্যও বেশ ‘সাহসী’ এবং ‘ইতিবাচক’। যেমন ছেলেকে নিয়ে ‘কলকাতার বুর্জ খলিফা’ দেখতে আসা ঘামেভেজা মায়ের মন্তব্য, ‘একটু তো দেখতে হবে বলুন, ছেলের প্রথম পুজো বলে কথা।’ এক যুবক আবার তুড়ি মেরে ওড়ালেন ডবল ডোজ ভ্যাকসিন, দূরত্ববিধি ইত্যাদি প্রসঙ্গ। তাঁর সাহসী জবাব, ‘আমার করোনা হবে না।’ আরেক প্রৌঢ় আবার দারুণ ইতিবাচক। কপালের ঘাম মুছে বললেন, ‘এবার ভালর দিকে এগোতে হবে। মা এসেছেন। এবার পজিটিভ ভাবে এগিয়ে যেতে হবে।’
এদিনের এই ঠেলাঠেলি ভিড় নিয়ে পুজো কমিটি বলছে, “আমরা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশিকা মেনেই ব্যবস্থা আর আয়োজন করেছি। কিন্তু মানুষ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভিড় করে আমরা কী করব! আমরা আমাদের যা যা করণীয় করেছি। দূরত্ববিধি বজায় রাখা, মণ্ডপের ভেতরে প্রবেশ না করা সবই করছি। কিন্তু সারা কলকাতার মানুষ যদি আমাদের সেরা পুজোটা দেখতে চলে আসে, তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই!”
যুক্তি অকাট্য। আবার করোনা আবহেও এমন ভিড় দেখে পুজো উদ্যোক্তাদের গলায়ও যেন কিঞ্চিৎ অহংকারের রেশ। সে যাই হোক। এদিনের ভিড় দেখার পর অনেকে বলছেন, সবে তো শুরু। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে তো হবে আসল খেলা। এদিকে কেউ কেউ টিপ্পনী করে বলছেন, তৃতীয় ঢেউ আসবে না, তাকে ডেকে আনা হবে।