তন্ময় প্রামাণিক: এক জীবন্ত ব্যক্তি চিৎকার করে সকলকে জানাচ্ছেন, তিনি মারা গিয়েছেন। চিৎকার করে তিনি দাবি করছেন, তাঁর শরীরে পচন ধরে গিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের কাছে তিনি আবেদন করছেন, চোখে তুলসি পাতা দিয়ে, নাকে তুলো দিয়ে দাহ করার ব্যবস্থা করা হোক। তিনি করোনায় মারা গিয়েছেন। এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল দক্ষিণ কলকাতার এক বর্ধিষ্ণু পাড়া।
৫৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক। করোনা তাঁকে ছোঁয়নি। তবে তাঁর কাহিনী আরও হৃদয় বিদারক। চারপাশে এত করোনায় মৃত্যু-আক্রান্ত হওয়া, মানুষের কান্না, হাহাকার দেখতে দেখতে নিজেকেই করোনায় মৃত বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। বাড়ি দাপিয়ে পরিবারের লোকজনকে বিশ্বাস করাতে চাইছেন, ‘আমি মৃত’। আর তা বুঝিয়ে উঠতে না পেরে মারধর করছেন।
প্রথমে বাড়ির লোকজন দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিল। পরে তাঁর আচরণে পাড়ার লোকেরও টেকা দায় হয়ে ওঠে। অবশেষে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিতে (আইওপি)। সেখানেই দীর্ঘ তিন সপ্তাহ চিকিৎসা চলার পর তাঁকে বোঝানো সম্ভব নয়, ‘আপনি মৃত নন, দিব্যি বেঁচে আছেন।’ ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন মানুষটি। মানছেন, তিনি রক্তমাংসের মানুষ।
করোনা সত্যিই মানুষকে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাচ্ছে। শরীর-মন-প্রাণ সর্বত্র বসাচ্ছে থাবা। নিয়মিত হাজার হাজার মানুষের মনের চিকিৎসা (পড়ুন মনের যত্ন) করার সরকারি হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিও বলছে এ ঘটনা বিরল। সেখানকার অধিকর্তা প্রদীপ সাহা বলেন, “আমরা কোনওভাবেই সেই ব্যক্তিকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না যে, তিনি জীবিত। তিনি মৃত নন। কারণ উল্টে তিনি আমাদের, চিকিৎসকদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, তিনি মারা গিয়েছেন। তাঁকে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাহ করানো হয়। তিন সপ্তাহ চিকিৎসার পর তাঁকে আমরা সুস্থ করে তুলি। এমন ঘটনা গোটা বিশ্বে বিরল। আমাদের হাসপাতালের স্টাডি রিপোর্ট যাচ্ছে আন্তর্জাতিক জার্নালে।”
আরও পড়ুন: অক্সিজেনের হাহাকার মেটাতে বেহালায় শুরু হল ‘অক্সিজেন লঙ্গর’
প্রদীপবাবু জানালেন, শুধু এ ঘটনাই নয়, করোনা পর্বে গত কয়েক মাসে বহু বিরল ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন তাঁরা। বলেন, ” করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন। মন খারাপে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর করোনা মুক্তির পরেও অনেকে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে শুরু করছেন। যেমন এক সরকারি কর্মচারী অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেন সুস্থ হয়ে ওঠার পর। তিনি সারাক্ষণ হাত ধুচ্ছেন, স্নান করছেন, বাড়ির টেবিল-আলমারি বারান্দা সবকিছু জল দিয়ে ধুচ্ছেন। ঘরের মেঝে, বারান্দা, শরীর পরিষ্কার করছেন জল দিয়ে। তাঁকেও আমরা ধীরে ধীরে সুস্থ করে তুলেছি। এমন সময় মানুষের মনোবল বাড়ানোটাই সবচেয়ে জরুরি কাজ। মানসিক শক্তি বাড়লেই ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়বে। তা হলে করোনার সঙ্গে লড়াই অনেক সহজ হবে।”
এখানেই শেষ নয় আরও বেশ কিছু বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়েছি আমরা এই করোনা পর্বে। আমাদের চিকিৎসকেরা নানা ধরণের কেস পাচ্ছেন। করণা আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন, মন খারাপে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর করোনা মুক্তির পরেও অনেকে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে শুরু করছেন।যেমন এক সরকারি কর্মচারী অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেন সুস্থ হয়ে ওঠার পর। তিনি সারাক্ষণ হাত ধুচ্ছেন, স্নান করছেন, বাড়ির টেবিল-আলমারি বারান্দা সবকিছু জল দিয়ে ধুচ্ছেন। ঘরের মেঝে বারান্দা শরীর পরিষ্কার করছেন জল দিয়ে। তাকেও আমরা ধীরে ধীরে সুস্থ করে তুলেছি। এমন সময় মানুষের মনোবল বাড়ানোর টাই সবচেয়ে জরুরি কাজ। মানসিক শক্তি বাড়লেই ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়বে। তাহলে করোনার সঙ্গে লড়াই অনেক সহজ হবে। ”
করোনা পর্বে লাফিয়ে বাড়ছে মানসিক ব্যাধি। শুধু আমাদের এখানেই নয়, গোটা পৃথিবীতে এমন সমস্যা বাড়ছে। এমন হচ্ছে, কেউ করোনা মুক্ত হয়ে গেলেও মনের মধ্যে অদ্ভূত এক ব্যাধি জাঁকিয়ে বসছে। মনকে সুস্থ থাকতে দিচ্ছে না। আবার এমনও হচ্ছে, দিনভর রোগ, সংক্রমণ, মৃত্যু, হাহাকার এসবের মধ্যে ডুবে থেকে মনে মনে নিজেকে কেউ কেউ সে জায়গায় ভেবে নিচ্ছেন। এও মনেরই এক খামখেয়ালিপনা। এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি খুলেছে বিশেষ পোস্ট কোভিড কেয়ার ক্লিনিক। মূলত করোনা মুক্ত হওয়ার পরও মানসিক কোনও সমস্যা হলে তার চিকিৎসা হবে এই ক্লিনিকে। হবে মনের যত্ন।