কলকাতা: কোভিড প্রোটোকলের সরলীকরণই তৃতীয় ঢেউয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তা সে কনটেনমেন্ট জোনের তালিকাই হোক বা হাসপাতালে কোভিড-নন কোভিড রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার নিয়মকানুন। তৃতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণের গতিবিধি পরীক্ষা করে দু’ক্ষেত্রেই পরিবর্তন চান রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিত্সকদের একাংশ।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলা এখন হাঁচি-কাশির শহরে পরিণত হয়েছে। কে পজিটিভ, কে নেগেটিভ বোঝাই দায়! পজিটিভ-নেগেটিভ ফারাক করার নিয়মই চিকিত্সা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কী বলছেন বিশিষ্ট চিকিত্সকরা? দেখুন এক নজরে
–
এক তৃতীয়াংশ মানুষ কোভিড পজিটিভ। তাঁদের প্রশ্ন, সেক্ষেত্রে কোভিড নির্দেশিকার কড়াকড়ি কেন? কোভিড প্রোটোকলের গেঁরোয় পড়ছেন নন-কোভিডরাও। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, কনটেনমেন্ট জোন ‘নিরর্থক’।
নন-কোভিডরা পজিটিভ হলে কোভিড ব্লকে। আসলে এসবে নষ্ট হচ্ছে চিকিত্সার গোল্ডেন আওয়ার।
চিকিত্সকদের প্রেসক্রিপশন
কোভিড-নন কোভিড ভেদাভেদ তোলা হোক। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের মতে, কোভিড প্রোটোকলের সরলীকরণ হোক। ICMR-এর নির্দেশিকার সঠিক রূপায়ণ
মৃদু উপসর্গে হাসপাতালে ভর্তি নয়। উপসর্গহীন হলে পরীক্ষারই দরকার নেই।
বছর শেষের ৯৬ ঘণ্টা আগে বাংলায় তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার ইঙ্গিত মিলেছিল। তারপর থেকে পার হয়েছে দু সপ্তাহ। তাতে সংক্রমণের যা গতিবিধি, তা পর্যবেক্ষণ করে বিশিষ্ট চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে প্রোটোকলের সরলীকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলছেন, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে দেখা যাচ্ছে, জরুরি কোনও রোগী অর্থাৎ যিনি দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম কিংবা কোনও ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত রোগী, যাঁর জরুরি অপারেশনের প্রয়োজন রয়েছে। এমন রোগীর ক্ষেত্রেও আগে কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে, তিনি আক্রান্ত হলে, তাঁকে কোভিড ব্লকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটাও সমস্যার। কারণ নন কোভিড ব্লক থেকে কোভিড ব্লকে স্থানান্তরের সময়ে তাঁর যে চিকিৎসার প্রয়োজন, পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা থাকছে না। ফলে সমস্য হচ্ছে।
কনটেইনমেন্ট জোনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, যেভাবে পজিটিভের সংখ্যা বেশি, নেগেটিভ খুঁজে পাওয়াই দায়, সেখানে কনটেইনমেন্ট জোন করে সংক্রমণ রোখা সম্ভব নয়। আখেরে এই ব্যবস্থাপনার মধ্যে সুস্থ চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
কোভিড প্রোটোকলের সরলীকরণ নিয়ে কী বলছেন বিশিষ্ট চিকিত্সকরা?
চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের বক্তব্য, “কনটেইনমেন্ট জোন তৈরি করে আজকে দাঁড়িয়ে সত্যিই লাভ নেই। কারণ প্রচুর সংখ্যক পজিটিভ। কিন্তু পরীক্ষাটা আমাদের করতেই হবে। পরীক্ষার সরলীকরণ করলে হবে না। উপসর্গহীন হলেও সংক্রমিত হতে পারেন। পরীক্ষা না হলে আমরা কিন্তু বিপদটা বুঝতে পারব না।”
আরও একটি বিষয় তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “যিনি ধরুন মাথায় আঘাত নিয়ে হাসপাতালে এলেন, তাঁর কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ল, তার কিন্তু অপারেশন পিছিয়ে দিলে হবে না। সেখানে আমাকে আগে হেড ইনজুয়েরির ট্রিটমেন্টটা করতে হবে আগে, অর্থাৎ অপারেশনের প্রয়োজন পড়লে, সেটাই আগে করতে হবে। সেখানে কিন্তু কোভিড বলে অপারেশন পিছিয়ে দেওয়া যায় না।”
চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের আবারও বক্তব্য, “আইসিএমআর কী প্রমাণ করতে চায় আমি জানি না, কিন্তু একটা কথা স্পষ্ট, যদি আমি সংখ্যাটা চাপতে চাই. তাহলে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আর যদি সঠিক তথ্য জানতে চাই, তাহলে পরীক্ষা প্রয়োজন।”
এক কথায়, কোভিড প্রোটোকল নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে দ্বিমত। প্রোটোকলের ঠেলায় লাটে উঠেছে স্বাস্থ্য কর্ম সংস্কৃতি।