প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা: বঙ্গের ভোট মানচিত্রে ক্ষয়িষ্ণু রাজ্যের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে সিপিআইএম। কিন্তু, শেষ বিধানসভা নির্বাচনে (Assembly Election) ভরাডুবি হলেও পৌর নির্বাচনে ফের নতুন উদ্যোমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বামেরা (Left Front)। খানিকটা হলেও বেড়েছে ভোট শতাংশ। বর্তমানে বামেরা যে গতিতে বঙ্গ রাজনীতিক ময়দানে উঠে আসার চেষ্টা করছে তা দেখে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসাই মূল লক্ষ্য সিপিএমের(CPIM)।
সদ্য সমাপ্ত একাধিক উপনির্বাচনেও বেশ খানিকটা ভালো ফল করেছে বামেরা। বঙ্গ রাজনীতিতে আবার জমি ফেরাতে এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে পঞ্চায়েত ভোটে। বাড়াতে হবে সাংগঠনিক শক্তি। তাই নতুন উদ্যোমে শক্তি বৃদ্ধিতে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিল সিপিআইএম। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে সেই কাজ জোরকদমে শুরু করেছে বামেরা। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করছেন রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেখানেই পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় নেতাদের ভূমিকা কী হবে, প্রাথী বাছাইয়ে কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হবে, তার পাঠ দেন রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বার্তা সূর্যকান্তর
পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রতিমাসেই নেওয়া হচ্ছে একাধিক কর্মসূচি। পঞ্চায়েত ভোটে দলের যুবদের কী ভূমিকা হবে, আগামী ২৩ জুলাই সেই বার্তা দেবেন সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। দক্ষিণবঙ্গের জন্য ওই সভা হবে মৌলালি যুব কেন্দ্রে। একই সভা উত্তরবঙ্গের জন্য হবে ৩১ জুলাই জলপাইগুড়িতে। একুশের বিধানসভা বা পরবর্তী পুরসভা বা উপ নির্বাচনে ছাত্র যুবদের প্রার্থী করেছিল সিপিআইএম। পঞ্চায়েত ভোটে সেই ধারা বজায় রাখা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেমন ছিল শে়ষ বিধানসভার গ্রামীণ এলাকার ফলাফল
এদিকে গোটা রাজ্যে গ্রামীণ এলাকায় ১৬৩ টি বিধানসভা আছে। তার মধ্যে একুশের ভোটে তৃণমূল জিতেছিল ১২৬টি। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল ৩৬টি। আর একটি পেয়েছিল আইএসএফ। আর সিপিআইএমের এত করুণ দশা হয়েছিল যে প্রথম তো দূর অস্ত! মাত্র দুটি আসনে দ্বিতীয় হয়েছিল কাস্তে হাতুড়ি তারার দল। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা আর জলঙ্গী আসনে দ্বিতীয় ছিল বামেরা। ফলে সেই গ্রামীণ এলাকায় বিজেপিকে পিছনে ফেলা যে শক্ত, তা বুঝতে রকেট সায়েন্স পড়তে হয় না বলছেন রাজনীতির কারবারিরা। তাই গ্রামাঞ্চলেও বর্তমানে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ একদা গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার বার্তা দেওয়া সিপিআইএমের। এদিকে গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব কাটিয়ে বামেদের ঘুরে দাঁড়ানো এত সহজ নয়। গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে সরাসরি লাভবান হওয়া পরিবারকে বুঝিয়ে সিপিএমের দিকে নিয়ে আসাও কষ্টসাধ্য কাজ। সেক্ষেত্রে বড় বাধা সন্ত্রাস বলেই মনে করছেন সিপিআইএম নেতৃত্ব। সেই পরিবেশ গ্রামীণ এলাকায় আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এক্ষেত্রে অবশ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা লাগাতার দুর্নীতির জেরে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে তাই উল্টোপথে বামেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করছেন নেতারা।
নেওয়া হচ্ছে একাধিক কর্মসূচি
এক্ষেত্রে পাহারায় পাবলিক নামে ক্যাম্পেন কিছুটা কাজ করেছে বলেই দাবি সিপিআইএম নেতৃত্বের। একইসঙ্গে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি আর সেক্ষেত্রে রাজ্যের এবং কেন্দ্রের দুই শাসক দলের মধ্যে আঁতাত তুলে ধরাই প্রচার কৌশলের অন্যতম অঙ্গ হবে বলে খবর। অন্যদিকে দলীয় কর্মীদের ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিতে বলছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বার্তা দিয়েছেন, দ্রুত কাজে নেমে পড়ার। এমতাবস্তায়, যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল বা বিজেপি এখনও ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি না নিলেও ময়দানে নেমে পড়ল সিপিআইএম। আর তার সুফল পাওয়া নিয়ে আশাবাদী এ রাজ্যের লাল পতাকার ধারক-বাহকরা।