কলকাতা: পঞ্চায়েত পাখির চোখ বামেদেরও। বিধানসভা ভোটে কার্যত সাইন বোর্ডে পরিণত হওয়া লাল শিবির ঘুরে দাঁড়াতে চায় গ্রাম থেকেই। লক্ষ্য পূরণে মাঠে নেমে পড়েছেন নেতারা। তৈরি হচ্ছে জনসংযোগের নতুন ব্লুপ্রিন্ট।
মূলত, শাসক ও প্রধান বিরোধী যখন ঘর গোছানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। তখন হাত গুটি বসে নেই বামেরাও। বিধানসভা ভোটে তৃতীয় স্থানে নেমে যাওয়া বামেদের খানিক অক্সিজেন জুগিয়েছে কলকাতা পুরভোট। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোতেও ভাল ফল করেছে বামেরা। পায়ের তলার হারানো জমি ফিরে পেতে বামেদেরও পাখির চোখ এখন পঞ্চায়েত।
কারণ পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল ২৪-র লোকসভার আগে নেতা কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার দাওয়াই হয়ে উঠতে পারে। তাই এখন থেকে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছে বামেরাও। শনিবারই বসিরহাটে দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক সেরে ফেলেছেন রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় নেতারা। পঞ্চায়েত ভোটে দলের নেতাদের ভূমিকা কী হবে? প্রার্থী বাছাইয়ে কোন-কোন দিকে নজর রাখতে হবে, তা নিয়ে পথ নির্দেশ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘লুঠেরাদের পঞ্চায়েত হয়ে গিয়েছে এখন। পঞ্চায়েত মানেই যেন অতিরিক্ত দাপট। ক্ষমতা, জবরদস্তি। মানুষ তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই গণতান্ত্রিক পূর্ণ বিকাশে মানুষকে যুক্ত করতে হবে। আর লুঠেরাদের পঞ্চায়েত ভাঙতে হবে।’
দ্বিতীয় হওয়ার দৌড়ে বামেরা
১) পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রতি মাসেই নেওয়া হচ্ছে একাধিক কর্মসূচি
২) যুবদের ভূমিকা কী হবে, ২৩ জুলাই তা ঠিক করে দেবেন সূর্যকান্ত মিশ্র
৩) দক্ষিণবঙ্গের জন্য ওই দিনই সভা রয়েছে মৌলালিতে
৪)উত্তরবঙ্গের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হবে জলপাইগুড়িতে ৩১ জুলাই
পঞ্চায়েতকে পাখির চোখ করে ময়দানে নেমে পড়েছে বামেরা। কিন্তু, গ্রামীণ এলাকায় বামেদের হাল এই মূহূর্তে কেমন?
কোথায় দাঁড়িয়ে বামেরা?
১) গ্রামীণ এলাকায় মোট ১৬৩টি বিধানসভা আসন রয়েছে
২) গত বিধানসভা ভোটে ১২৬টি আসন যায় তৃণমূলের দখলে
৩)বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল ৩৬টি আসন
৪) ১টি আসনে জয়ী হয় ISF
৫) বামেরা ১টিও আসনে জয় পায়নি, মাত্র ২টি আসনে তারা ২ নম্বরে ছিল
পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপিকে পিছনে ফেলা মোটেই সহজ হবে না। তাই গ্রামাঞ্চলে সাংগঠিন দুর্বলতা কাটানোই এখন বামেদের মূল টার্গেট। আর সেই লক্ষ্য পূরণে কাস্তে-হাতুড়ি-তারার হাতিয়ার হতে পারে জনসংযোগ কর্মসূচি।
তবে, বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি-তৃণমূল।তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বাম আমলের যাবতীয় অপশাসনের দায় নিয়ে কার্যত তাঁরা লুপ্ত প্রায় অবস্থায় চলে গিয়েছ। সেখানে তারা ভাবে দেখুক কীভাবে প্রস্তুতি নেবে। অপরদিকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দল চেষ্টা করবেই ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে মানুষ ৩৪ বছর ধরে সিপিএম-কে দেখেছে। তাদের গ্রহণ করেছে। পরীক্ষা করেছে এবং প্রত্যাখান করেছে।’
বিরোধীরা যতই কটাক্ষ করুক। বাংলার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বামেরা। অনেক সিপিএম নেতাই বলছেন মাঠে নামতে পারলে খেলা ঘুরবেই। আর সেই লক্ষেই তাঁরা এগোতে চান।