কলকাতা: টেট পরীক্ষা হচ্ছে না যুদ্ধ হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। ১১ ডিসেম্বর, রবিবার টেট পরীক্ষায় রাজ্য সরকারে কড়াকড়ি প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করলেন আইনজীবী তথা সিপিআইএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার পরীক্ষা করাবে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু, পরীক্ষা নেওয়ার আগে এই যে যুদ্ধকালীন ব্যবস্থা- এটা কি কোনও গণতান্ত্রিক দেশ? এটা তো হিটলারের থেকেও খারাপ অবস্থা।” এই কড়াকড়ির পিছনেও রাজ্য সরকারের দুর্নীতি রয়েছে অভিযোগ তুলে প্রবীণ আইনজীবীর তোপ, “এটা আসলে নিজেদের অপদার্থতাকে আড়াল করার চেষ্টা।”
২০১৭ সালের পর এবছর ফের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা, টেট হল। আর এই পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে রাজ্যজুড়ে প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বিশেষ কড়াকড়ির ব্যবস্থা করা হয়। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে কটাক্ষ করে সিপিআইএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের তোপ, “এই সরকারের নিয়োগে দুর্নীতিই ছিল নীতি। আইনে বাধ্যতা আছে, প্রতি বছর টেট নিতে হবে। অথচ দিনের পর দিন টেট নেওয়া হয়নি। জনগণের চাপে ৫ বছর পর এবছর টেট পরীক্ষা হল। আর পরীক্ষা হল যুদ্ধের মতো করে।”
যদিও এত কড়াকড়ির মধ্যেও এদিন পরীক্ষা চলাকালীন সোশ্যাল মিডিয়ায় টেট প্রশ্নপত্র ঘুরতে দেখা যায়। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। যদিও এই প্রশ্নপত্র ‘ভুয়ো’ বলে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু, এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলে বিকাশ ভট্টাচার্যের তোপ, “২০১১ সালের পর থেকে প্রত্যেকটা পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। ধারাবাহিকতা দেখলেই সেটা দেখা যাবে। অর্থাৎ গোটা প্রশাসনে দুর্নীতিই মুখ্য উপজীব্য। যারা পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা আতঙ্কিত। এমন ভাব দেখানো হচ্ছে যে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য পরীক্ষার্থীরা দায়ী। এটা নিজেদের অপদার্থতাকে আড়াল করার চেষ্টা।”
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পিছনে রাজ্য প্রশাসনেরই মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “আসলে ওরা নিজেরাই একটা দল তৈরি রাখে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেবে। টাকা তুলতে হবে তো। এটা প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে বলে এত প্রস্তুতির নাম করে ছাত্রছাত্রীদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” যাঁরা টেট পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত বলেও দাবি প্রবীণ আইনজীবীর। এভাবে আদতে পরীক্ষা হয় না দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “যাঁরা পরীক্ষা নিচ্ছেন তাঁদের উচিত পদত্যাগ করে সরে যাওয়া। যোগ্য মানুষদের পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া উচিত। পরীক্ষা নেওয়া কোনও কঠিন ব্যাপার নয়। রাজ্যে ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ের পরীক্ষা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, রাজ্যে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। বহু চাকরিপ্রার্থীর হয়ে হাইকোর্টে মামলাও লড়েছেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। এবার ৫ বছর পর টেট পরীক্ষা ঘিরে রাজ্য সরকারের বিশেষ পদক্ষেপে কার্যত হতভম্ব এই আইনজীবী তথা প্রবীণ বাম নেতা।