কলকাতা: একের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। দফায় দফায় আলোচনা চলেছে। কখনও পটনা, কখনও বেঙ্গালুরুতে, কখনও মুম্বইয়ে। কিন্তু প্রাদেশিক রাজনীতির ক্ষেত্রে সমীকরণ কী হবে, তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বিশেষ করে বাংলার ক্ষেত্রে। কারণ, একদিকে যখন জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীলনকশা তৈরি হচ্ছে, তখন বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করছে বাম-কংগ্রেস। সেদিক থেকে দেখলে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকের দিকে নজর ছিল সকলের। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে রাজ্যে মহম্মদ সেলিমদের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছিল রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলে।
জাতীয় রাজনীতিতে যাই হোক না কেন, রাজ্যে যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে বামেরা, সেকথা ইতিমধ্য়েই একাধিকবার বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীরা। আর এবার রাজ্য কমিটির বৈঠকেও উঠে এল সেই কথা। এমনকী লোকসভা ভোটে যে একের বিরুদ্ধে একের লড়াই যে সবক্ষেত্রে সম্ভব হবে না, সেকথাও এদিন উঠে এল সিপিএমের বৈঠকে। সূত্রের খবর, ভোট সময়ে গোটা দেশের একের বিরুদ্ধে একের লড়াই হয়তো হয়ে উঠবে না বলেই মনে করছেন রাজ্যে লাল নিশানের ধারক-বাহকরা। রাজ্য কমিটির বৈঠকে উঠে এসেছে, ভোট পরবর্তী জোটের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখার কথা। কারণ, যেহেতু তাঁরা মনে করছেন একের বিরুদ্ধে একের লড়াই সবক্ষেত্রে সম্ভব হবে না, তাই ভোট পরবর্তী জোট বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলেই উঠে এসেছে বামেদের বৈঠকে। একইসঙ্গে, ইন্ডিয়া জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল শেষ পর্যন্ত থাকবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বামেদের মনে।
সূত্র মারফত এও জানা যাচ্ছে, রাজ্যে তৃতীয় দল হিসেবে থাকতে চাইছে না বামেরা। সেই বার্তাও উঠে এসেছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে। বলা হয়েছে, তৃতীয় পার্টি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেলে চলবে না। তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে লড়াইয়ের মধ্যে যে বামেরা ভোট পাচ্ছে না সেই কথাও উঠে এসেছে বৈঠকে। সূত্রের খবর রাজ্য কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে, তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই একইভাবে জারি রাখবে বামেরা।
এর পাশাপাশি, পুজোর পর থেকে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করার কথাও বলা হয়েছে বৈঠকে। ধারাবাহিক প্রচারে যে অভাব রয়েছে, সেটির দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বেশিরভাগ প্রচার কর্মসূচি ভোটকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে বলেই আত্মসমালোচনার সুর উঠে এসেছে বৈঠকে। সেই কারণে পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা-সহ অন্যান্য স্থানীয় ইস্যুকে হাতিয়ার করে মানুষের মধ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, অক্টোবরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে। দিল্লিতে আগামী ১৬-১৭ অক্টোবর পলিটব্যুরো বৈঠক আছে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের রিপোর্টের কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘উৎসবের মরশুমে মানুষের কাছে আমরা যাব। ওরা উদ্বোধনে ব্যস্ত থাকবে। মানুষের দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা বাড়ি বাড়ি যাব। সামগ্রিক গণআন্দোনের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’