কলকাতা: আপনার কাছে একটি ফোন আসতে পারে। ওপর প্রান্ত থেকে অত্যন্ত সৌজন্যের সঙ্গে প্রশ্ন করা হতে পারে, আপনি কি করোনার প্রথম ডোজ় নিয়েছেন? উত্তর হ্যাঁ হলে দ্বিতীয় ডোজ়টি নিয়েছেন কিনা সেই প্রশ্নও করা হতে পারে। এরপরও ধরুন আপনার উত্তর হল হ্যাঁ। এর প্রেক্ষিতে ওপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি কিংবা মহিলার প্রশ্ন হতে পারে, আপনি তবে বুস্টার ডোজ় নিতে প্রস্তুত কিনা। আপনার কোভিড টিকা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কিন্তু ততক্ষণে তাঁরা ডেটা ঘেঁটে নিজেদের কাছে রেখেছেন। ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তের কথা ভেবে বুস্টার ডোজ় নিতেও ধরুন আপনি সম্মতি জানালেন। তখনই আপনার মোবাইল নম্বরে একটি লিঙ্ক পাঠাবেন ওঁরা। সঙ্গে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে. মোবাইলে আসা ওটিপি! ব্যস, সেই ওটিপি বললেই, আপনার সর্বনাশ। আপনার ওই মোবাইল নম্বরের সঙ্গে যুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাবে টাকা। বুস্টার ডোজ়ের নাম করে শহরে শুরু হয়েছে নতুন প্রতারণা চক্র।
ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশে তাদের ফেসবুক পেজে এই বিষয়ে একটি সচেতনতামূলক পোস্ট করেছে। জয়েন্ট সিপি ক্রাইমের তরফে ‘ফ্রড অ্যালার্ট…’ শীর্ষক একটি পোস্টে লেখা হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, “প্রতারকরা সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করার জন্য নানা পথ খুঁজে বার করছে। প্রতারকরা আপনাকে ফোন কিংবা মেসেজ করতে পারে বুস্টার ডোজ আপনি নেবেন কিনা! যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তারা আপনাকে লিঙ্ক কিংবা ওটিপি পাঠাবে। খুবই সাবধান। এতেই আপনি আপনার সর্বস্ব টাকা হারাতে পারেন। যদি এই ধরনের কোনও ফোন কল কিংবা মেসেজ পান, তাহলে আপনি কোনও লিঙ্ক ডাউনলোড করবেন না। ওটিপিও শেয়ার করবেন না।”
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের কাছে এই হেন বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। সেক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার গোয়েন্দারা এই বিষয়টিকে নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও দিচ্ছেন সচেতনতার বার্তা।
এ প্রসঙ্গে সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, “আজকের দিনে সাইবার ক্রাইম একটা অত্যন্ত মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। আপনাদের কাছে বুস্টার ডোজ় নিয়ে এরকম কোনও ফোন কিংবা মেসেজ এলে, তাতে গুরুত্ব দেবেন না। কোনও ধরনের ওটিপি কাউকে বলবেন না। কোনও লিঙ্ক শেয়ার করবেন না।”
যত প্রযুক্তির অগ্রগতি ঘটছে, সাইবার অপরাধীরা ততই তাদের জাল ছড়াচ্ছে। সাইবার ক্রাইমই এখন কলকাতা পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন পুলিশ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে বিনীত গোয়েলও সেই কথা বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “কলকাতা পুলিশের সাইবার সেল অত্যন্ত সংগঠিত। সাইবার অপরাধীরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে হানা দিচ্ছে। প্রচুর সাধারণ মানুষকে শিকার বানাচ্ছে। এর মোকাবিলা করতে আর কী কী পদক্ষেপ করা যায়, তার প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ।” সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সামাজিক মাধ্যমকেও বেছে নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ।